যে মানুষটি আপনার কাছে খুব ভালো, আমার বিচারে তিনি হয়তো অত্যন্ত খারাপ। আবার অন্য আরেকজনের কাছে হতে পারে তিনি সম্পূর্ন গুরুত্বহীন। আপনি যার ভালবাসায় স্বপ্নসমৃদ্ধ, যাকে পাওয়ার জন্য পাগল, আমি অনেক চেষ্টা করেও বুঝে উঠতে পারিনা যে, সেই ব্যাক্তি কি এমন গুনসম্পন্ন কিংবা মহিমান্বিত যে আপনি তাঁকে এতটা ভালবাসেন? এই ভাবে বহু বিশেষণের একাধিক মাত্রা( প্রেক্ষিত) থাকতে পারে। এটাকেই বলা হয় আপেক্ষিকতা। এই আপেক্ষিকতা ঠিক কোন গ্রহের সংস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটাও কিন্তু একটা আপেক্ষিক বিষয়। ভাবের আত্তিকরণের বৈপরীত্যের কারনের প্রেক্ষিত বদলে যেতে পারে প্রতি নিয়ত, দৃষ্টি এক হলেও যেমন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় এই বিষয়টাও ঠিক তেমনই।
১) লগ্নস্থান (দেহভাব বা তনুভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার দেহ, বর্ণ, যশ,আকৃতি, ও যোগ্যতা প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয়ে থাকে |
২) দ্বিতীয়স্থান (দ্বিতীয়ভাব বা ধনভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার অর্থাদি সঞ্চয়, বাকশক্তি, গলা, চক্ষু ,মুখ ,কুটুম্ব ,আশ্রিতবর্গ ,খাদ্য ও ক্রয়–বিক্রয় প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
৩) তৃতীয়স্থান (সহজভাব বা ভ্রাতৃভাব): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার অনুজ ভ্রাতা–ভগ্নী,সাহস,পরাক্রম,কষ্ট ,উত্তম ভূষণাদি এবং দাসদাসী প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
৪) চতুর্থ স্থান (বিদ্যাভাব বা বন্ধুভাব বা মাতৃভাব বা সুখভাব ):এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার মাতা ,গৃহ,বন্ধু ,গৃহসুখ ,যানবাহন,বক্ষ,পিতৃবিত্ত ,মনোবৃত্তি ,মাতৃসুখ ,রক্তসঞ্চালন এবং হৃদপিন্ড প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
৫) পঞ্চমস্থান: (সন্তান বা পুত্রভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার সন্তান (পুত্রকন্যা) ,ভক্তি ,বুদ্ধি ,বিদ্যা ,মতিগতি ,রচনাশক্তি ,মন্ত্রণাশক্তি ,ভালোবাসা ,উদার ,হৃদয় এবং আন্ত্রিক বিচার করা হয় |
৬) ষষ্ঠস্থান: (ষষ্ঠভাব বা রিপুভাব বা শত্রুভাব ) এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার রোগ ,শত্রু ,মাতুল,জ্ঞাতি,কটিদেশ,বিমাতা এবং ক্ষতব্রনাদি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
৭) সপ্তমস্থান: (সপ্তমভাব বা জায়াভাব বা পত্নীভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার স্ত্রী বা স্বামী (পুরুষ জাতকের ক্ষেত্রে স্ত্রী ও স্ত্রী জাতিকার ক্ষেত্রে স্বামী ) , ব্যবসা –বাণিজ্য ,অংশীদার , গমনাগমন ,ভ্রমণ,কামপ্রবৃত্তি ,আনন্দসুখ এবং মূত্রশয় সম্পর্কে বিচার করা হয়ে থেকে |
৮) অষ্টমস্থান 🙁 অষ্টমভাব নিধনভাব বা মৃত্যুভাব বা আয়ুভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার মৃত্যু ,মৃত্যুর কারণ ,মৃত্যুর স্থান ,শোক ,জয় –পরাজয় ,গুহ্যস্থান ,মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা মৃত ব্যক্তির ধনসম্পত্তি প্রাপ্তি ,মানসিক কষ্ট ,অপবাদ এবং অপমান প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |( কারো কারো মতে ,এই স্থান তপস্থানও বটে |অতএব এই স্থান থেকে জাতক জাতিকার ধর্মাদি ও পারলৌকিক বিষয়াদি সম্পর্কেও বিচার করা |
৯) নবমস্থান (নবমভাব বা ভাগ্যভাব বা ধর্মভাব): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার ভাগ্গ্যোন্নতি বা অবনতি ,ধর্ম ,গুরু ,পৌত্রাদি ,ধর্মানুষ্ঠান,পিতা,ঊরুদেশ এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
১০ )দশমস্থান (দশমভাব বা কর্মভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার কর্ম বা জীবিকা ,পদমর্যাদা,সম্মান ,যশ ,পিতা ,কীর্তি ,জানুদেশ সম্পর্কে বিচার করা হয় |
১১ ) একাদশস্থান ( আয়ভাব বা লাভভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকার অর্থোপার্জন ,সাফল্য বা সিদ্ধি ,বাহনাদি ,কন্যা, জামাতা ,পুত্রবধূ ,জ্যেষ্ঠভ্রাতা প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয়|
১২ ) দ্বাদশস্থান (দ্বাদশভাব বা ব্যয়ভাব ): এই স্থান বা ভাব থেকে জাতক জাতিকের স্বচ্ছলতা ,অর্থাদি ব্যয় ,ভ্রমণ ,(বিশেষত দূর বা বিদেশ বা প্রবাস ভ্রমণ ),রাজদণ্ড, হানি ,ক্ষতি ,দানশীলতা ,শয়নসুখ এবং পদদ্বয় প্রভৃতি সম্পর্কে বিচার করা হয় |
রাশিচক্রে দেখা যাচ্ছে ভূমিপ্রধান, অগ্নিপ্রধান, বায়ুপ্রধান এবং জলপ্রধান ঘরগুলি প্রত্যেকে প্রথম, পঞ্চম এবং নবম সম্পর্কে ত্রিকোন করে বসেছে | যাদের প্রত্যেকটি নক্ষত্রও সেই ভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে আছে |
প্রথম , পঞ্চম ও নবমে অগ্নিপ্রধান ,ভূমিপ্রধান , বায়ুপ্রধান ও জলপ্রধান রাশিগুলির মধ্যে যে অবস্থান তার গভীর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা রয়েছে ভারতীয় জ্যোতিষে | রাশিচক্রের কোনো গৃহই অসংলগ্ন নয় | প্রতিটি রাশির অবস্থানের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে | জগতের যাবতীয় ঘটনাকে তিনটি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় | কারণ অবস্থা , অথবা কি কারণে ঘটনাটি ঘটলো অর্থাৎ তার বীজ অবস্থা | যেমন গাছের বীজ , বীজের কারণ গাছের ফল , বীজের অংকুরিত অবস্থাই বীজের প্রকাশ অবস্থা এবং পরিণত অবস্থা হল একটি পরিণত ফলন্ত বৃক্ষ | সেই কারণে বীজাবস্থাকে প্রথম গৃহ , প্রকাশ অবস্থাকে পঞ্চম গৃহ এবং পরিণত অবস্থাকে নবম গৃহ বলা হয়েছে |
পঞ্চমভাব তাই পুত্র ভাবের নির্দেশক , এবং নবমভাব পিতৃভাব বা পুত্রের পরিণত অবস্থার নির্দেশক |
সূক্ষ্মজগতে যেকোনও ঘটনার কারণ তার বিগত কর্ম , বর্তমান তার প্রকাশ এবং বর্তমান কর্মের পরিণতি তার বর্তমান জন্মের কৃতকর্ম |
পূর্বে আমরা কোথায় ছিলাম আমাদের জানা নেই | পিতাই আমাদের সেই অজানা দেশ থেকে জগতে নিয়ে আসেন বলে নবম বা পিতৃস্থানকে বিদেশ বলা হয় এবং বিদেশ যাত্রার বিচার নবম স্থান থেকেই করা হয় |
সুতরাং সেই সূত্র ধরে যেকোনোও ঘটনার বিচার করলে আমরা দেখবো আজ যে রাশিতে ঘটনার সূত্রপাত হল তার পঞ্চম গৃহে তার প্রকাশ ঘটবে এবং নবম গৃহে তার পরিণতি ঘটবে |
ভারতীয় জ্যোতিষে সবটাই “অদৃষ্ট ” নয় | প্রথম থেকে ষষ্ঠ গৃহ পর্যন্ত সবটাই আমাদের দৃষ্টির আওতার মধ্যে থাকে এবং ইচ্ছা দ্বারা আমাদের আয়ত্ত্বাধীন |
প্রথম গৃহকে বলা হয় তনু বা শরীর | আমাদের শরীরকে ঠিক রাখতে ব্যক্তিগত ভাবে সজ্ঞান প্রচেষ্টা সবসময়েই ফলপ্রদ হয়ে থাকে |
দ্বিতীয় গৃহ আমাদের শরীরের পুষ্টির গৃহ | সুতরাং শরীরের পুষ্টির জন্য যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম , আহার , নিয়মানুবর্তিতা , সংযম ইত্যাদি আমাদেরই দায়িত্ব এবং আমাদের আয়ত্বাধীন |
তৃতীয় গৃহ আমাদের পুরুষাকার, সম্পূর্ণ ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভরশীল |
চতুর্থ গৃহ আমার মাতা | মাতৃগর্ভে জন্মেছি বলেই তাঁকে আমি মাতা বলে জানি বা চিনি | তিনি আমার চোখে দৃষ্ট এবং আমার সুখ– স্বাছন্দের দেখাশোনা করেন | কোনো অসুবিধা হলে তাঁর কাছে আবদার করতে পারি , প্রতিবাদ করতে পারি স্ব –ইচ্ছায় | পঞ্চম গৃহ বিদ্যাবুদ্ধি , আমি লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী হব কোন বিষয়ে | কোন বিষয় আমায় আকৃষ্ট করে আমার নিজেরই জানা থাকে | পড়াশুনার শেষে চাকরি না ব্যবসা তাও আমাকে নিজেকেই ঠিক করতে হয় এবং তার সুযোগ অনেকই পাওয়া যায় পুরুষাকারের প্রয়োগের মাধ্যমে |
ষষ্ঠ গৃহটি রোগ ভোগের ঘর | ইন্দ্রিয়ের গৃহ | ইন্দ্রিয়গুলির কারকতা সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকে সজাগ এবং সেগুলি নিয়ন্ত্রিত রাখা ব্যক্তিগতভাবে আমারই দায়িত্ব | সংযম – নিয়মের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে বশে রাখতে পারলে রোগভোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে | এতক্ষন আমরা নিজের ব্যক্তিগত বিষয়েই সীমাবদ্ধ ছিলাম | এগুলি সবই আমাদের অন্তর্জগতের বিষয় |
এরপর সপ্তম গৃহে এসে দেখি এখান থেকেই আমাদের বহির্জগতের যাত্রা এবং ক্রিয়াকলাপের শুরু | সপ্তম গৃহ বা পত্নী স্থান থেকেই অর্থাৎ বিবাহের পর থেকেই বাইরের সামাজিক জীবনে আমাদের প্রবেশ