রাশিচক্র ,রাশি ,গ্রহ ও ভাব এই চারটি বস্তু নিয়ে ফলিত জ্যোতিষের কারবার–কাজেই এই চারটি বস্তুর মূল ধারণা কী তা জানা দরকার | তা নইলে ফলিত জ্যোতিষের দিক থেকে এদের অর্থ এবং প্রয়োগ হৃদয়ঙ্গম করা শক্ত হবে |
আমরা জানি সূর্য রোজ আকাশের গায়ে একটু একটু করে সরে যান এবং ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ৯ মিনিটে ৯ সেকেন্ড পরে আকাশের ঠিক সেই বিন্দুতে ফিরে আসেন যে বিন্দু থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল | আসলে পৃথিবী সূর্যকে বেড় দিয়ে ঘুরছে ; কিন্তু আমরা দেখি সূর্য আকাশে একটু একটু করে সরে যাচ্ছেন | সূর্য আকাশের যে পথ দিয়ে রোজ একটু করে সরে সরে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ৯ মিনিট ৯ সেকেন্ড পরে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসেন তাকে সিদ্ধান্ত অর্থাৎ গণিত জ্যোতিষের ভাষায় বলে রবিমার্গ বা ক্রান্তিবৃত্ত (Ecliptic )|
এই রবিমার্গ বা Ecliptic হচ্ছে জ্যোতিষ গণনার মূল ভিত্তি | কেননা এই রবিমার্গের উপরে গ্রহ এবং ভাবের অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে থাকে | রবিমার্গ সূর্যের গতিপথ | সূর্যের যেমন পৃথিবীর উপর প্রভাব আছে – তেমনি রবিমর্গেরও পৃথিবীর উপর প্রভাব আছে এবং যে সব গ্রহ বা নক্ষত্র রবিমর্গের উপর নিজেদের শক্তি বিস্তার করে ,পৃথিবী তাদের দ্বারাও প্রভাবিত হয় |
একটা গ্রহ বা নক্ষত্র ৮ অংশ দূর থেকে রবিমর্গের উপর প্রভাব স্থাপন করতে পারে –কাজেই তার দু পাশে ৮ অংশের মধ্যে যত নক্ষত্র আছে তারা রবিমর্গের উপর নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করে | রবিমার্গ আকাশের গা দিয়ে একটু ট্যারাচা ভাবে পূব থেকে পশ্চিমে সমস্ত পৃথিবীটাকে বেড়ে রয়েছে | রবিমর্গের উত্তরে ৮ অংশ ও দক্ষিণে ৮ অংশের মধ্যে যত নক্ষত্র আছে , তাদের যদি একটা চওড়া পটির মতো কল্পনা করা যায় ,তাহলে আমরা মনে করতে পারি ,আকাশের গায়ে লাগানো একটা চওড়া পটির চাকা পৃথিবীকে বেড় দিয়ে ঘুরছে | চওড়া পটির এই চাকাকে ‘রাশিচক্র ‘ বলে |
যদিও সমস্ত রাশিচক্রটা আমাদের বেড় দিয়ে ঘুরছে তাহলেও সেই চক্রের মধ্যে যে নক্ষত্রটি যেখানে বসানো আছে তার কোন নড়চড় হয় না ,সে নক্ষত্রগুলি স্থির – এবং সেই জন্যেই এক একটি নক্ষত্রপুঞ্জ ধরে তাদের আলাদা নাম দেওয়া সম্ভব হয়েছে | সমস্ত রাশিচক্রকে বারটি নক্ষত্রপুঞ্জজে ভাগ করা হয় এবং এদের এক একটিকে বলে রাশি |
প্রত্যেক রাশি মাপে সমান –কাজেই এক একটি রাশি লম্বালম্বিভাবে ক্রান্তিবৃত্তের ৩০ অংশ এবং আড়াআড়িভাবে উত্তরে ৮ অংশ এবং দক্ষিণে ৮ অংশ জুড়ে আছে | রাশি বারটি– মেষ ,বৃষ ,মিথুন ,কর্কট ,সিংহ ,কন্যা ,তুলা ,বৃশ্চিক ,ধনু ,মকর, কুম্ভ এবং মীন | এক রুদ্র ছাড়া যতগুলি গ্রহ আছে তাদের পৃথিবী দেখলে কোন সময়ে রাশিচক্রের বাইরে যেতে দেখা যায় না | সূর্য তো বরাবরই রবিমর্গের উপরে থাকেন – অন্য গ্রহগুলির মধ্যে রুদ্র (Pluto ) ছাড়া অপর কোনও গ্রহ কখনো আরোভাবে আড়াআড়িভাবে রবিমার্গ থেকে ৫–১/২ অংশের বেশি দূরে যায় না | কাজেই তারা রাশিচক্রের মধ্যে থাকে |
গণিত জ্যোতিষের গ্রহের ধারণা ও ফলিত জ্যোতিষের গ্রহের ধারণা এক নয় ,যে গগনচারীর প্রভাব পার্থিব ব্যাপারের উপর একটা বিশেষভাবে প্রকটিত হয় –সে গগনচারী গ্রহে হোক ,উপগ্রহে হোক ,আর গাণিতিক বিন্দুই হোক – তাতেই ফলিত জ্যোতিষে গ্রহ বলে অবিহিত করা হয় | ফলিত জ্যোতিষের মতে গ্রহ তিন রকম (১) তারা গ্রহ ,(২) দীপ্ত গ্রহ এবং (৩) তমো গ্রহ | এর মধ্যে তারাগ্রহগুলিই গণিত জ্যোতিষের গ্রহ – এই তারা গ্রহ আটটি –মঙ্গল ,বুধ ,বৃহস্পতি ,শুক্র ,শনি ,প্রজাপতি (Uranus ) ,বরুন (Neptune ) ও রুদ্র (Pluto ) | দীপ্তগ্রহ দুটি –রবি ও চন্দ্র –গণিত জ্যোতিষের মতে রবি স্থির নক্ষত্র এবং চন্দ্র উপগ্রহ | তমোগ্রহ দুটি –রাহু ও কেতু –গণিত জ্যোতিষের মতে এ দুটি গাণিতিক বিন্দু –রবিমর্গের সঙ্গে চন্দ্রের কক্ষের যে দুই জায়গায় ছেদ হয়েছে তারাই রাহু ও কেতু | এ ছাড়া পৃথিবী একটি প্রধান গ্রহ এবং পৃথিবীর জীব আমরা ,পৃথিবীর প্রভাবই আমাদের উপর সব চেয়ে বেশি | কিন্তু পৃথিবীর উপর অন্য সব গগনচারীর প্রভাব বিচারে ফলিত জ্যোতিষের কাজ বলে ,এ বিজ্ঞানে তাকে গ্রহ বলে ধরা হয়নি | রাশিচক্রে পৃথিবীর অবস্থানের বারটি বিন্দু কল্পনা করা হয় – এই বারটি বিন্দুকে বারটি ভাব বলা হয়ে থাকে|