অন্নপ্রাশন ,হাতে খড়ি ,বিয়ে ,ভিতপুজো ,গৃহপ্রবেশ – এইসব আচার -অনুষ্ঠান আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে | এই আচার – অনুষ্ঠান গুলিকে বলা হয় সংস্কার | এই সব সংস্কার গুলির মধ্যে ১০টি সংস্কার আমাদের জীবনে যুগ যুগ ধরে প্রথাগত ভাবে চলে আসছে | আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা এইসব আচার – অনুষ্ঠান আমাদের জীবনে কতটা সফলতা আনে | দৈহিক ,মানসিক ,পারিবারিক ,শান্তি আনতে ,কর্ম প্রাপ্তিতে বাধা কাটাতে ,চাকরির পদোন্নতিতে ,কর্মে স্বীকৃতি,ব্যবসা আরাম্ভ ও উন্নতির জন্য শাস্ত্রে অনেক উপায় বলা আছে | কিভাবে রোগমুক্তি ,শত্রুদমন , তীব্র দাম্পত্য কলহ ,অবাধ্য সন্তান কে বসে আনা,যে কোনো রকম ফাঁড়া বা বিপদ প্রভৃতি অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কোন কাজটি কখন করলে ?এই সব বিষয় নিয়ে এবার আমরা আলোচনা করবো |
এই পৃথিবীতে মানুষ হলো শ্রেষ্ঠ প্রাণী | আহার ,নিদ্রা ,ভীতি ,ইত্যাদি বৈশিষ্ট গুলি পশু পাখি থেকে কীট পতঙ্গ থেকে মানুষ সবার ই আছে | তবুও মানুষ শ্রেষ্ঠ প্রাণী | চেতনাবোধ ,ন্যায়বোধ ,সদাচার ,আর দায়িত্ব -কর্তব্য বোধ মানুষ কে সবার ওপরের আসনে বসিয়েছেন | ধর্ম হলো এইসব গুনের মূল | মানুষের মনুষত্ব কে বিকশিত করেছে ধর্ম |সব থেকে প্রাচীন তম ধর্ম হলো বৌদিক ধর্ম |বৈদিক ধর্মের উৎপত্তি স্থল হলো বেদ | এই বেদের ওপর নাম শ্রুতি | মুনিঋষিরা ঈশ্বরের দৈববাণী শুনেছেন আসতে আসতে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের শিষ্যদের মধ্যে | আজ ও মানুষ সেগুলো মেনে চলে আসছে | এই বেদের সাথে কোনো কোনো জায়গায় যুক্ত হয়ে আছে তন্ত্র শাস্ত্র | এই শাস্ত্র আজ ও আমাদের নতুন পথের দিশা দেখায় | ব্রাহ্মণ ,ক্ষত্রিয় ,বৈশ্যদের ১০টি সংস্কারের নির্দেশ আছে | এর মধ্যে কয়েকটি আছে ব্রাহ্মণ দের জন্য|
এই যে ১০ বিধ সংস্কার কার্য কে ৪টি ভাগে ভাগ করা যায়|
সে গুলি হলো গর্ভ সংস্কার ,শৈশব সংস্কার ,কৈশোর সংস্কার ,আর যৌবন সংস্কার | এই ১০ বিধ সংস্কার গুলি হলো –
( ১ ) গর্ভধান
( ২ ) পুংসবন ,
(৩ ) সীমান্তউন্নয়ন
(৪ ) জাতকর্ম
( ৫ ) নামকরণ
(৬ ) অন্নপ্রাশন
( ৭ ) চূড়াকরণ
( ৮ ) উপনয়ন
( ৯ ) সমাবর্তন
( ১০ ) বিবাহ |
এই সংস্কার গুলির মধ্যে প্রথম ৩টি হলো গর্ভ সংস্কার তার পরের ৩টি কে বলা হয় শৈশব সংস্কার আর পরের ৩টি কে বলা হয় কৈশোর সংস্কার বাকি ১ টি সংস্কার হলো যৌবন সংস্কার | এবার এই ১০টি সংস্কার এর মধ্যে যৌবন সংস্কার কি ভাবে কখন কোন নিয়মে পালন করবে জাতক জাতিকা এবং এই সংস্কার পালন করলে জাতক জাতিকা কি কি সুফল পাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো |
বিবাহ :
শাস্ত্র মতে বিবাহ ৮ প্রকারের হয় | এই বিবাহ কথাটির একটি বিশেষ অর্থ আছে | বিবাহ মানে বহন করা | গৃহে পতির যথাপোযুক্ত ভাবে পত্নীকে পালন করাই হলো বিবাহ | এখানে পালন করার অর্থ হলো বহন করা | ব্রাহ্মবিবাহ সর্বশেষ্ঠ | এই বিবাহ আজ ও চলে আসছে | এই ব্রাহ্ম বিবাহের মধ্যে আছে মালাবদল ,শুভদৃষ্টি প্রভৃতি নিয়ম গুলি | আগে এই ব্রাহ্ম বিবাহে বাগদান নামক একটি অনুষ্ঠান হতো | দুটি পরিবারে সম্মতি নিয়ে এই বাগদান অনুষ্ঠানটি হতো | বর্তমানে এই বাগদান অনুষ্ঠানটি নেই | তার পরিবর্তে আশীর্বাদ অনুষ্ঠানটি যোগ হয়েছে | বর্তমানে বিবাহের দিন বিয়ের আগে এই আশীর্বাদ ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় | বিয়েরদিন সকালে সর্বপ্রথম বর আর কনের বাড়িতে নান্দীমুখ অনুষ্ঠানটি হয় | তার পর বরের গায়ে হলুদ , কলাতলায় স্নান , কনে বাড়িতে গায়ে হলুদ তত্ত্ব পাঠানো এছাড়াও অনেক স্ত্রী আচার থাকে | হোম ,কন্যা সম্প্রদান ,সিঁদুরদান প্রভৃতি | অনেক পারিবারিক নিয়ম এর মধ্যে দিয়ে এই বিবাহ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয় |
বিবাহের সুফল :
এই বিবাহের মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবনে পূর্ণতা আসে | শাস্ত্র মতে এই বিবাহ অনুষ্ঠান মানুষের জীবনে সুখ ও শ্রীবৃদ্ধি করে | এই বিবাহের মধ্যে দিয়ে বংশরক্ষা, নামরক্ষা , পিতৃপুরুষের পিন্ডদান প্রভৃতি সম্পন্ন হয় |