অন্নপ্রাশন ,জাতকর্ম ,নামকরণ – এইসব আচার -অনুষ্ঠান আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে | এই আচার – অনুষ্ঠান গুলিকে বলা হয় সংস্কার | এই সব সংস্কার গুলির মধ্যে ১০টি সংস্কার আমাদের জীবনে যুগ যুগ ধরে প্রথাগত ভাবে চলে আসছে | আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা এইসব আচার – অনুষ্ঠান আমাদের জীবনে কতটা সফলতা আনে | এই যে ১০ বিধ সংস্কার কার্য কে ৪টি ভাগে ভাগ করা যায়| সে গুলি হলো গর্ভ সংস্কার ,শৈশব সংস্কার ,কৈশোর সংস্কার ,আর যৌবন সংস্কার |
সংস্কার কি ভাবে কখন কোন নিয়মে পালন করতে হবে এবং এই সংস্কার পালন করলে জাতক জাতিকা কি কি সুফল পাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো |
জাতকর্ম : আমাদের শাস্ত্রে এই জাতকর্ম নামক এই নিয়মটি আছে | শাস্ত্রে বলা আছে এই নিয়মটি সন্তানের বাবা কে করতে হবে | যেদিন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় সেইদিন এ এই নিয়ম করতে হয় | যেহেতু সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সন্তানের বাবার শুভ অশৌচ থাকে | তাহলে কি এই শুভ অশৌচ থাকা কালীন ভূমিষ্ঠ সন্তানের পিতা এই জাতকর্ম নিয়মটি করতে পারবেন ? হ্যা পারবেন | কারণ সন্তান এর পিতা এই জাতকর্ম নিয়মটি করতে পারবেন এছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কর্ম করতে পারবেন না | শাস্ত্র মতে বৃদ্ধি কর্ম বা নান্দীমুখ কর্ম করে তার পর হোমাদিকর্ম করে সন্তানের মঙ্গল কামনা করতে হয় | এই নিয়ম এ আছে |
জাতকর্মের সুফল : এই জাতকর্মের কিছু সুফল আছে | এই জাতকর্মের ফলে ভূমিষ্ঠ সন্তান স্বাস্থ্যবান হবে | নবজাতক সন্তান দীর্ঘ আয়ু ও হবে | সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে | এর সাথে সাথে নব জাতক সন্তান প্রতুৎপন্নমতি হবে |
নামকরণ : শাস্ত্রে এই নামকরণ বিষয়টি ও খুব গুরুত্বপূর্ণ | জোতিষ শাস্ত্র মতে শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে দশ , একাদশ , দ্বাদশ ,বা শততম দিনটিতে নামকরণ করার কথা বলা আছে | শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে অশৌচ এর শেষদিন সেই দিন টাতে নামকরণ করতে হবে | শাস্ত্রে এই নামকরণের নিয়মটি ও বলা আছে | নামকরণের আগের দিন বৃদ্ধি শ্ৰাদ্ধ অথবা নান্দীমুখ করে তার পর হোমাদি ক্রিয়াটি করতে হবে | তার পর ২টি বা ৫টি প্রদীপ জ্বালাতে হবে ঘি দিয়ে |জ্বলন্ত ওই প্রদীপে একটি করে নাম মনে মনে কল্পনা করতে হবে | আরো একটি নিয়ম আছে এই নাম করণের | একটা বড়োপাথরের থালা নিতে হবে | সেই পাথরের থালায় ২টি অথবা ৫টি নাম লিখে রেখে তার ওপর পানপাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে | তার ওপর আবার ২টি বা ৫টি ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে হবে | যে প্রদীপটি বেশি জ্বলজ্বল করবে সেই প্রদীপের নিচে লিখে রাখা নামটাই সন্তানের জন্য শুভ বলে ধরা হবে | রাশি বা নক্ষত্ররের স্থান অনুসারে নামের প্রথম অক্ষর ঠিক করা হবে |
নামকরণের সুফল : শাস্ত্রে এই নামকরণের ও সুফলদিক আছে |সন্তানের রাশি অনুযায়ী অথবা সন্তানের জন্ম নক্ষত্রের বিভাগ অনুসারে ভূমিষ্ঠ সন্তানের নামের প্রথম অক্ষর ঠিক করা হয় | এর ফলে নবজাতক শিশুটির সুফল প্রাপ্তি হবে | শিশুটির মঙ্গল ও শ্রীবৃদ্ধি হবে শিশুটির সাথে সাথে সেই বংশের ও গৌরব বৃদ্ধি হয় |সন্তান টি বুদ্ধিমান , বিদ্ধান ও হয় |
নিষ্ক্রমণ : এই “নিষ্ক্রমণ “শব্দের অর্থ হলো বাইরে গমন করা |শাস্ত্র মতে নবজাতক শিশু তার জন্মের ঠিক তৃতীয় মাসে বা চতুর্থ মাসে এই নিষ্ক্রমণ নিয়ম পালন করতে পারে | দুমাসের পর থেকে তিনমাসের মধ্যে যে কোনো একটি দিনে এই নিষ্ক্রমণ নিয়ম করা যেতে পারে | নিয়ম অনুসারে শিশুটিকে জন্মের পর এই দিনটাতে প্রথম বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় |নবজাতক শিশুটির চন্দ্র শুদ্ধি,তারাশুদ্ধি,শুভতিথি , নক্ষত্র বার ,যোগকরণ ,আর লগ্ন বিচার করে তবে এইদিনটি ঠিক করতে হয় |
নিষ্ক্রমণের সুফল : শাস্ত্র মতে এই নিষ্ক্রমণ এর সুফল দিক আছে | এই নিষ্ক্রমণের অর্থ হলো নবজাতক শিশু যাতে জীবনের এগিয়ে যাওয়ার পথে যত বাধা বিপত্তিআছে সেগুলো যাতে কেটে যায় তার জন্য এই নিয়ম পালন করতে হয় | নবজাতক শিশুটির জীবনে যাতে কোনো বাধাবিঘ্ন না আসে |শিশুটির জীবন যাতে সুন্দর ভাবে কাটে তার জন্য এই নিষ্ক্রমণ নিয়ম করতে হবে |
অন্নপ্রাশন : শাস্ত্রমতে এই অন্নপ্রাশন নিয়মটি নবজাতক শিশুটির জন্য অত্যাবশক করণীয় নিয়ম | নব জাতক শিশুটি যদি পুত্র সন্তান হয় তবে তার অন্নপ্রাশন হবে ছয় মাসে বা আটমাসে | আর নবজাতক শিশুটি যদি কন্যা সন্তান হয় তবে তার অন্নপ্রাশন হবে পাঁচ মাসে বা সাত মাসে | এটাই সঠিক সময় অন্নপ্রাসনের |যদি কোনো কারণে এই মাসগুলিতে অন্নপ্রাশনের নিয়ম করা সম্ভব না হয় | তাহলে গৌণকালেও অন্নপ্রাশন করা যেতে পারে | আমরা জানি যে মলমাসে কোনো শুভ কাজ করা যায় না কিন্তু অন্নপ্রাশনের নিয়মটি এই মলমাসে করা যায় | শাস্ত্র মতে এক্ষেত্রে কোনো বাধা নিষেধ নেই | তবে পুত্র সন্তানের অন্নপ্রাশনের ছয়মাস এ আবার কন্যা সন্তানের অন্নপ্রাশনের পাঁচমাসে যদি মল মাসে করাযায় | কিন্তু গৌণ মাসে অর্থৎ কন্যা দের সাতমাসে আর পুত্র সন্তানদের আট মাসে যদি মলমাস পরে যায় সেক্ষেত্রে অন্নপ্রাশন করা যাবে না |অন্নপ্রাশনের কিছু নিয়ম আছে যেগুলি হলো বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ বা নান্দীমুখ শ্রাদ্ধ তার পর হোমযজ্ঞ ও করতে হয় |এই সব কিছুর পর মামা বা মামার মতো কোনো ব্যাক্তি এই শিশুটির মুখে অন্নপ্রসাদ তুলে দেবে | এটাই হবে শিশুর প্রথম অন্ন খাওয়া | এটাই অন্নপ্রাশনের নিয়ম শাস্ত্র মতে |
অন্নপ্রাশনের সুফল : এই দিনটি শিশুটির জীবনে খুব ই গুরুতূপূর্ণ দিন |এই দিনে সমাজে সবার সাথে পরিচিতহয় | আর এই অন্নপ্রাশনের মাধ্যমে শিশুটির শরীর স্বাস্থ সুগঠিত হয় | দেহে পুষ্টি হয় | বলবান হয় | সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে ওঠে | এমনকি শিশুটির বুদ্ধির বিকাশ হয় |