অগ্নি, বায়ু ,জল ও পৃথ্বী পৃথিবীর কোন কোন জিনিসকে নির্দেশ করে ?

অগ্নি বায়ু জল

পৃথিবীতে  জড় পদার্থ চার রকম -অগ্নি,পৃথ্বি ,বায়ু ,জল | পঞ্চ ভুতের মধ্যে এই চারটিই  দৃশ্যমান জগতে আমরা অনুভব করতে পারি |  আকাশ পদার্থটির অভিব্যক্তি সৃষ্টিজগতে নেই | এই চার রকম পদার্থ বাস্তবিক একই   জড়ের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা – তারা আসলে ভিন্ন নয় | জড় পদার্থের সর্ব্বাপেক্ষা স্থুল  অবস্থার নাম ‘পৃথ্বি’ ;  বিজ্ঞানে যে অবস্থার পদার্থকে solids  (কঠিন) আখ্যা দেওয়া হয়েছে |

বিজ্ঞানের যে অবস্থার পদার্থকে liquids  (তরল) বলে , তা পৃথ্বীর  চেয়ে সূক্ষ্মতর এবং -সেই অবস্থার নাম ‘জল’ ;’বায়ু’ তার চেয়ে ও সূক্ষ্মতর অবস্থা -এবং এই অবস্থার বস্তুর বৈজ্ঞানিক নাম gases  (গ্যাস) , সকলের চেয়ে সূক্ষ্মতম অবস্থা ‘তেজ’ বা ‘অগ্নি’ ; বৈজ্ঞানিকগণ এই অবস্থার পদার্থকে electrical  matter  (বৈদ্যুতিক বা তড়িৎ পদার্থ ) বলে অভিহিত করেছেন -তার অভিব্যক্তি উত্তাপ ,আলোক ,বিদ্যুৎ প্রভৃতি ব্যাপার| সৃষ্টির প্রথম অভিব্যক্তিতে পদার্থের অগ্নি অবস্থামাত্র ছিল ;সেই অগ্নির পরিণতি বায়ু ,বায়ুর পরিণতি জল এবং জলের পরিণতি পৃথ্বী অর্থাৎ ক্রমশ সুক্ষতর থেকে স্থুলতর পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে |

জড়পদার্থের এই চার রকম  অবস্থাঅগ্নি,পৃথিবী,বায়ু ,জলএদের উপর শক্তি ক্রমাগত কাজ করছে | শক্তির তিন অবস্থাসত্ত্ব ,রজ  তম |জড়ের মধ্যে শক্তির তম অবস্থা বাইরে অভিব্যক্ত নয়তা সুপ্ত | শক্তির এই অবস্থাকে বিজ্ঞানে অব্যক্ত শক্তি (potential  energy ) বলে | রজ  অবস্থায় শক্তি সম্পূর্ণ অভিব্যক্ত ,বিজ্ঞানে এর নাম দেওয়া হয়েছে ক্রিয়াশীল শক্তি (kinetic  energy  ) | সত্ত্ব অবস্থা শক্তির শুদ্ধ অবস্থা ,তা জড়পদার্থের নিরপেক্ষ abstract  অবস্থা; সুতরাং জড়পদার্থের abstract  অবস্থার মত ,তা আমাদের স্থুল  ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় রজ  তম অবস্থার মাঝামাঝি শক্তির একটা অবস্থা ধরা যেতে পারেযে অবস্থার শক্তি potential  নয় ,kinetic  নয়তা পূর্ণ স্থির নয় , সম্পূর্ণ গতিশীলও  নয় ,কাজেই শক্তির চঞ্চল অবস্থা রজস্থির অবস্থা তম এবং যা চাঞ্চল্য ধৈর্যের সংমিশ্রণ ,তাই মিশ্র | যাদের অন্য ভাষায় চর ,স্থির দ্যাত্মক (দ্বিস্বভাব) বলা হয়  |

এই চার রকম জড়পদার্থ তিন রকম শক্তির মিশ্রনে বার রকমের পদার্থ হতে পারে | রাশিচক্রকে বারটি রাশিতে ভাগ করে ,এক একটি রাশিকে বার রকম পদার্থের এক একটি দ্যোতকস্বরূপে নির্দেশ করা হয় | রাশিচক্রের বার ভাগকে এক এক পদার্থের নির্দেশক বলে ধরা হয় |

অগ্নি বায়ু জল

অগ্নি ,পৃথ্বী ,বায়ু ,জলএই চার রকমের জড়  পদার্থের মধ্যে সূক্ষ্মতর অগ্নি , অগ্নির চেয়ে বায়ু ,বায়ুর চেয়ে জল এবং জলের চেয়ে পৃথ্বী ক্রমশঃ স্থুলতর অবস্থা | 

মেষ চর অগ্নি, ধনু দ্যোত্যমক অগ্নি এবং সিংহ স্থির অগ্নিকে জ্ঞাপন করে | তুলা, মিথুন কুম্ভ  যথাক্রমে চর বায়ু , দ্যাত্মক বায়ু  এবং স্থির বায়ু কে নির্দেশ করে | কর্কট, মীন বৃশ্চিক যথাক্রমে চর জল  , দ্যাত্মক জল এবং স্থির জলকে নির্দেশ করেঅগ্নি, বায়ু ,জল পৃথ্বী পৃথিবীর কোন কোন জিনিসকে নির্দেশ করে , সে সমন্ধে একটা ধারণা থাকলে রাশির ভাব আরো পরিষ্কার করে বোঝা যেতে পারে |  

অগ্নি নির্দেশ করে পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের সূক্ষ্ম অবস্থাকে যা সব সময় স্পষ্ট অনুভব করা যায় না ,ঈথার ইলেকট্রন ,অনু ,পরমাণু দেহকোষের nucleus  ,যার অস্তিত্ব যুক্তি দ্বারা বোঝা যায় কিন্তু ইন্দ্রিয়দ্বারা দ্বারা  যায় না | বায়ু নির্দেশ করে সেই সব জিনিষকেযা ইন্দ্রিয়দ্বারা অনুভূত হলেও , নির্দিষ্ট আকার বা স্থান পরিমাণে বদ্ধ নয় ; যেমন সব রকমের গ্যাস বাস্প প্রভৃতি | এক ঘনইঞ্চি (cubic  inch  ) পরিমান স্থানে যে গ্যাস আছে ,তাকে দশ ঘনইঞ্চি পরিমান স্থানে রাখলে ,তা দশ ঘনইঞ্চি স্থানেই  অধিকার করবে | জল নির্দেশ করে সেই সব পদার্থকেযার আকার নির্দিষ্ট নেই , কিন্তু স্থান পরিমান নির্দিষ্ট আছে ; যেমন গোল পাত্রের মধ্যে যে তরল পদার্থ গোল দেখায় ,তা চতুষ্কোণ পাত্রে রাখলে চতুষ্কোণ হয়ে যায় |

কিন্তু এক ঘনইঞ্চি স্থানের জল দশ ঘনইঞ্চি পাত্রে রাখলেও ,তা এক ঘনইঞ্চি স্থানেই  অধিকার করবে ,বায়ুপদার্থের মত দশ ঘনইঞ্চি স্থানে ব্যাপ্ত হবে না | পৃথিবীর সব তরল জিনিষই এই জলের অন্তর্গত | পৃথ্বী নির্দেশ করে সেই সব পদার্থকেযার আকার এবং স্থান পরিমাণ একেবারে নির্দিষ্ট ,যা বাইরের শক্তির সংঘাত ছাড়া নিজের আকার বদলাতে পারে না ; পৃথিবীর যত কঠিন জিনিস সব পৃথ্বীর অন্তর্গত | এই অগ্নিপৃথ্বীবায়ুজল এবং চরস্থিরদ্যাত্মক রাশির এই গুনগুলিই হচ্ছে জ্যোতিষ গণনার ভিত্তি | এই উপপত্তিকেই আশ্রয় করে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার | রাশি বা ভাবের যা কিছু কারকতা এবং গ্রহের কারকতার কতক অংশ ,রাশির এই ব্যাপার আশ্রয় করেই  উদ্ভুত  হয়েছে |

Author Bio

Related Posts