মানুষের জীবনে গর্ভ সংস্কার কতটা প্রয়োজনীয়?
বৈদিক ধর্মের উৎপত্তি স্থল হলো বেদ | এই বেদের ওপর নাম শ্রুতি |মুনিঋষিরা ঈশ্বরের দৈববাণী শুনেছেন আসতে আসতে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের শিষ্যদের মধ্যে | আজ ও মানুষ সেগুলো মেনে চলে আসছে | এই বেদের সাথে কোনো কোনো জায়গায় যুক্ত হয়ে আছে তন্ত্র শাস্ত্র | এই শাস্ত্র আজ ও আমাদের নতুন পথের দিশা দেখায় |
মানব জীবনে বহুবিধ সংস্কারের মধ্যে প্রথম তিনটি উল্লেখযোগ্য সংস্কার হলো ( ১ ) গর্ভধান ( ২ ) পুংসবন ,(৩ ) সীমান্তউন্নয়ন | কখন কোন নিয়মে পালন করবে জাতক জাতিকা এবং এই সংস্কার পালন করলে জাতক জাতিকা কি কি সুফল পাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো |
গর্ভধান : বহুপ্রাচীন যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে | বিবাহের পর এই নিয়ম করার কথা শাস্ত্রে আছে | শাস্ত্রে মঙ্গলবার আর শনিবার কে বলে খরবার | শাস্ত্রে বলা আছে মঙ্গলবার আর শনিবার এই দুদিন গর্ভধান এর জন্য একদম ই শুভ না | তাই এই দুদিন কে বাদদিয়ে বাকি দিন গুলো গর্ভধান এর জন্য ভালো দিন হিসাবে ধরা হয়ে থাকে | এই গর্ভধানের আগে কিছু নিয়ম আছে আমাদের শাস্ত্রে | নান্দীমুখ বা বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ গর্ভধান এর আগে করতে হয় | এর পর হবে হোমাদি ক্রিয়া | এই হোমাদি ক্রিয়া সম্পন্ন করে শুদ্ধআচারে মন্ত্র দ্বারা শোধন করা পঞ্চগব্য খাওয়াবেন স্বামী তার স্ত্রী কে | এই গর্ভধান সংস্কার জীবনে একবার করা হয় | শাস্ত্র মতে এইদিনটি স্বামী ,স্ত্রীর জীবনে খুব শুভ একটি দিন | শাস্ত্রে বলা আছে ঋতুবতী রমণী দের গর্ভধান সংস্কার করার কথা | ঋতুকালের ১৬দিন বাদ দিয়ে তার মধ্যে প্রথম ৪দিন ছেড়ে দিয়ে তার পর বাকি ৬ ,১০ ,১২ ,১৪ আর ১৬ এই দিন গুলি পুত্রটি পুরুষ সম্ভোগ করবে
গর্ভধানের সুফল : শাস্ত্রে বিবাহের পর স্ত্রী কে গর্ভধান করানো উচিত | এটাতে স্ত্রীর জীবনে অনেক সুফল নিয়ে আসে | নারীর গর্ভ শুদ্ধ হয় | আর সেই নারীর গর্ভে যে সন্তান আসে সেই সন্তান সুস্থ ,সবল আর বলশালী হয় | হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রমী হয় | তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রী সুস্থ সন্তানএর জননী হয় |
(২) পুংসবন : আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে যে ,পুংসবন করতে হবে তৃতীয় মাসে | যেহেতু চতুর্থ মাসে নারীর গর্ভের সন্তান এর স্পন্দন অনুভূত হয় | তাই তার আগে অর্থাৎ তৃতীয় মাসে পুংসবন করতে হয় | এই নিয়ম আছে শাস্ত্রে | যেদিন থেকে নারী গর্ভ ধারণ করলো তার ঠিক ৬১ থেকে ৯০ দিন এর মধ্যে এই পুংসবন করতে হবে | আমাদের পঞ্জিকায় এই পুংসবন এর যে নির্দিষ্ট দিন থাকে সেই দিনে এই নিয়ম টি করতে হবে |
পুংসবন এর সুফল : এই পুংসবন এর সুফল দিক ও আছে | স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের স্পন্দন যাতে স্বাভাবিক থাকে তার জন্য এই পুংসবন করতে হবে | স্ত্রীর গর্ভের সন্তান এর স্পন্দন যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান এর জন্ম হয় |আর স্পন্দন যদি কম বা বেশি হয় তাহলে দুর্বলতার আশঙ্কা থাকবে |
(৩ ) সীমন্তোন্নয়ন : শাস্ত্রে বলা আছে যে স্ত্রীর জীবনে একবারই সীমন্তোন্নয়ন করতে হবে | প্রথম সন্তান এর ক্ষেত্রে এই নিয়ম করার কথা বলা আছে | যদি স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান আসে তবে সেক্ষেত্রে আর এই নিয়ম আর করার দরকার নেই| এই সীমন্তোন্নয়ন করার ও কিছু নিয়ম আছে শাস্ত্রে | স্ত্রীর গর্ভ ধারণ করার পর থেকে চতুর্থ মাসে এই নিয়ম করতে হয় | যদি অন্য কোনো কারণ বসত স্ত্রীর এই নিয়ম করতে না পারে সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ মাসে করতে পারেন | যদি তাতেও স্ত্রীর অন্য কোনো কারণ বসত এই নিয়ন করতে না পারেন তাহলে অষ্টম মাসে ও এই সীমন্তোন্নয়ন করতে পারেন |
সীমন্তোন্নয়ন এর সুফল : শাস্ত্রে এই সীমন্তোন্নয়ন এর কথা বলা আছে তার কারণ এই সীমন্তোন্নয়ন করলে স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের দীর্ঘ আয়ু লাভ করে | স্ত্রীর গর্ভের সন্তান বিদ্ধান ও বলবান হয় |