জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাশি ও রাশি অধিপতি নির্ণয় করার পদ্ধতিটা কি বিজ্ঞান ভিত্তিক?

জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাশি

জ্যোতিষশাস্ত্রে  এক একটা রাশিকে এক একটা গ্রহের ক্ষেত্র বা গৃহ ,অথবা অন্যভাবে বললে ,এক একটা গ্রহকে এক একটা রাশির অধিপতি বলে উল্লেখ করা হয়  | জ্যোতিষ যেহেতু  বিজ্ঞান ভিত্তিক  সুতরাং  রাশির অধিপতি নির্ণয় করার  একটা যুক্তিসঙ্গত প্রণালী নিশ্চয় অবলম্বন করা হয়েছে | 

ব্যবহারিক কাজে  মেষ রাশিকে আদিরাশি বলে ধরা হলেও,মূলে সিংহ রাশিই আদি রাশি | সৃষ্টির বীজ সিংহ রাশিতে আছে ,যদিও সৃষ্টির পূর্ণ অভিব্যক্তি হয়েছে মেষরাশিতে | তেমনি সৌরজগতের সৃষ্টির পূর্ণ অভিব্যক্তি সূর্যতে নেই ,কিন্তু তার মূল কারণ আছে সূর্যে   | সেই কারণেই সিংহ রাশিকে সূর্যের ক্ষেত্র বা সূর্যকে সিংহরাশির  অধিপতি বলা হয়েছে

সিংহ অগ্নিরাশি ,আলোক  উত্তাপের ব্যঞ্জক  ,সেই আলোক উত্তাপ আমরা সূর্য থেকেই পেয়ে থাকি এবং সৃষ্টির জন্য আলোক উত্তাপ একান্ত প্রয়োজন | আলোক এবং উত্তাপ ছাড়াও সৃষ্টির জন্য আর একটি জিনিষ দরকার ,সেটি হচ্ছেরসঅর্থাৎ জল | সেই জন্য সিংহের পাশে যে জলরাশি কর্কট  ,তাকেচন্দ্রেরক্ষেত্র বলে নির্দেশ করা হয়েছে

এই অগ্নি অর্থাৎ আলোক উত্তাপ এবং জল অর্থাৎ জলীয় বা তরল পদার্থ , সৃষ্টি বিষয়ে এদের কাৰ্য্য একটু ভিন্ন ধরণেরএকটি শক্তি রূপে কাজ করে ,অপরটি  আধার  রূপে কাজ করে | একটির কাজ প্রত্যক্ষ ,অপরটির পরোক্ষ

সেই জন্য প্রত্যক্ষ সৃষ্টির জ্ঞাপক রবিকে সিংহরাশির এবং পরোক্ষ সৃষ্টির জ্ঞাপক চন্দ্রকে কর্কটরাশির অধিপতি বলা হয়েছে | সিংহ জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রত্যক্ষ ,পুরুষ বা দিবা রাশি এবং কর্কটকে পরোক্ষ ,স্ত্রী বা রাত্রি রাশি সংজ্ঞা দেওয়া হয় |  

জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাশি 1

অগ্নি এবং জল যেমন সৃষ্টির বা জীবনের পোষকতা করে বায়ু পৃথ্বী তেমনি ধ্বংস বা মৃত্যুর সহায়তা করে | প্রাণবন্ত দেহে একদিকে অগ্নি জল এবং আর একদিকে বায়ু পৃথ্বী এদের দ্বন্দ্ব চলছে |জ্যোতিষশাস্ত্রেও রাশিচক্রকে বারটি রাশিতে ভাগ করে তিনটিকে অগ্নি ,তিনটিকে জল ,তিনটিকে বায়ু এবং তিনটিকে পৃথ্বী বলে নির্দেশ করা হয়েছে | অগ্নি এবং জল রাশিকে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে এবং অগ্নির বিপরীত স্থানের রাশিকে, বায়ু জলের বিপরীত স্থানের রাশিকে পৃথ্বী বলা হয়েছে | তার কারণ সৃষ্টির ব্যাপারে অগ্নির কাজ যেমন প্রত্যক্ষ এবং জলের কাজ যেমন পরোক্ষ ,ধ্বংসের ব্যাপারে বায়ুর কাজ তেমনি প্রত্যক্ষ পৃথ্বীর কাজ তেমনি পরোক্ষ

প্রত্যেক রাশির ভাবের সঙ্গে প্রত্যেক গ্রহের ভাব মিলিয়ে দেখে এক একটি গ্রহকে একটি এক রাশির অধিপতি বলে নির্ণয় করা হয়েছে |  রবি (চন্দ্র) , মঙ্গল ,বৃহস্পতি  সৃষ্টিজ্ঞাপক গ্রহ এবং শনি ,বুধ ,শুক্র ধ্বংসজ্ঞাপক  গ্রহ | সেইজন্য অগ্নি জল রাশিগুলিকে সৃষ্টিজ্ঞাপক রবি ,চন্দ্র,মঙ্গল ,বৃহস্পতির ক্ষেত্র এবং বায়ু পৃথ্বী   রাশিগুলিকে ধ্বংসজ্ঞাপক শনি ,বুধ ,শুক্রের ক্ষেত্র বলে ধরা হয়েছে | সৃষ্টিজ্ঞাপক গ্রহের মধ্যে রবি ,চন্দ্র ছাড়া অন্য গ্রহ দুটির প্রত্যক্ষ পরোক্ষ দুরকম ভাবই আছে ; সেইজন্য মঙ্গল বৃহস্পতির দুটি করে ক্ষেত্র ,একটি অগ্নি একটি জল | রবির শুধু প্রত্যক্ষ ভাব আছে বলে রবির একটিমাত্র ক্ষেত্র |অগ্নি রাশি সিংহ এবং চন্দ্রের শুধু পরোক্ষ ভাব আছে বলে তার একটিমাত্র ক্ষেত্র জলরাশি কর্কট |ধ্বংসজ্ঞাপক গ্রহ তিনটির প্রত্যেকটির এই প্রত্যক্ষ পরোক্ষ দুরকম ভাবই আছেতাই তাদের  দুটি করে ক্ষেত্রএকটি বায়ু আর একটি পৃথ্বী

সুতরাং বোঝা গেলো যে ,মেষ ,সিংহ ,ধনু এই তিনটি অগ্নিরাশি এবং কর্কট বৃশ্চিক ,মীন এই তিনটি জলরাশি এরা রবি ,চন্দ্র ,বৃহস্পতি মঙ্গলের ক্ষেত্র | আর মিথুন ,তুলা ,কুম্ভ এই তিনটি বায়ুরাশি এবং বৃষ ,কন্যা ,মকর এই তিনটি পৃথ্বীরাশি এরা শনি ,বুধ শুক্রের ক্ষেত্র |

তাছাড়া এই প্রবন্ধের প্রথমদিকের আলোচনায় বোঝা গিয়েছিলো যে, আদি অগ্নিরাশি সিংহকে রবির ক্ষেত্র বলা যুক্তিসঙ্গত এবং তার পাশের জলরাশি কর্কটকে চন্দ্রের ক্ষেত্র বলা যেতে পারে | ধনুমেষ এবং বৃশ্চিকমীন এদের মধ্যে কোনটি বৃহস্পতির ক্ষেত্র এবং কোনটি মঙ্গলের ক্ষেত্র তা নির্ণয় করা দরকার | সৃষ্টির সুখ নির্দেশ করে বৃহস্পতি এবং সৃষ্টির দুঃখ নির্দেশ করে মঙ্গল | রবির কাজ দেহকোষের বর্ধন ,শনির কাজ দেহকোষের নাশ ,বৃহস্পতির কাজ হীতকারী বস্তুকে নিজস্ব করে নেওয়া ,বুধের কাজ অহীতকারী   বস্তুকে নিজস্ব করা ,মঙ্গলের কাজ অহীতকারী পদার্থের বহিষ্কার ,শুক্রের কাজ হীতকারী পদার্থের বহিষ্কার ;সেইজন্য রবি চন্দ্রের ক্ষেত্রে বিপরীত রাশি দুটিকে বুধের ক্ষেত্র  এবং মঙ্গলের ক্ষেত্রে বিপরীত রাশি দুটিকে শুক্রের ক্ষেত্র বলা হয়েছে | এই হিসাবে সিংহ কর্কটের বিপরীত রাশি কুম্ভ মকর শনির ক্ষেত্র ,ধনু মীনের বিপরীত রাশি মিথুন কন্যা বুধের ক্ষেত্র এবং মেষ বৃশ্চিকের বিপরীত রাশি তুলা বৃষ শুক্রের ক্ষেত্র

Author Bio

Related Posts