আমাদের জীবনের চলার পথ অমসৃণ | এই জীবনে চলার পথে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় | আর তাই এই সব সমস্যা আমাদের মন কে চঞ্চল করে দেয় | আমাদের এই মানসিক অবস্থা থেকে নিজেকে ঠিক রাখতে এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে ওঁ – কার সাধনা খুব দরকার | আমাদের সবার ভিতর যে দেবশক্তি কাজ করে চলেছে ,ওঁ – কার সাধনা সেটাকে জাগ্রত করে তোলে |
ওঁ কার আমাদের শরীর ও মনের ওপর কি প্রভাব বিস্তার করে ? ওঁ কার জপের ফলে আমরা কি কি ফল লাভ করতে পারি ? ভারতের মুনি ঋষিরা বলে গেছেন যে ওঁ কার জপের দ্বারা আমরা জীবনের সব কিছু লাভ করতে পারি | বেশিরভাগ নর – নারী কারো না কারোর সঙ্গ সর্বদা চায় | যেমন ধরুন ঘর ,বাড়ি ,সংসার ,অপরাবিদ্যা প্রভৃতি | এইসব জড় পদার্থ চিন্তা করলে মনের শুদ্ধভাব আসে না |
শাস্ত্রে বলা আছে যে বেদের সার হলো গায়েত্রী মন্ত্র | আর এই গায়েত্রীর সার হলো ওমকার মন্ত্র | এই ওঁ – কার হলো মহামন্ত্র | ওঁ কার হলো আদ্যাশক্তি | এই কারণেই ওঁ কার এর ওপর নাম প্রণব |
নারী –পুরুষ আমরা সবাই এই ওঁ–কার মন্ত্র জপ করতে পারি | এই মন্ত্র সর্বদা জপ করলে আমাদের মন শুদ্ধ হয় | পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে সমর্থ হতে পারি | সেই কারণেই মন্ত্রের বা দীক্ষার আগে ওঁ মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় |
এই ওঁ – কার মন্ত্র জপ করলে আমাদের কোনো অসুখ – বিসুখ হয় না | মন শুদ্ধ ও শান্ত হয় | স্বাস্থ্য সতেজ ও প্রাণবন্ত হয় | আমরা ধীরে ধীরে অমৃতলোকে পৌঁছাতে পারি | এই ওঁ কার পবিত্রতম শব্ধ |ওঁ কার এর অর্থ সগুন ওঁ সাকার এবং নির্গুণ বা নিরাকার যা সর্বোত্তম সত্য| প্রতিদিন ওঁ – কার মন্ত্র জপ করলে মন শান্ত হয় | মনের অধ্যাত্ম চেতনা জাগ্রত হয় এবং ভগবানের ওপর বিশ্বাস বেড়ে যায় | গীতায় বলা আছে মৃর্তু কালে ওঁ কার মন্ত্র জপ করতে করতে দেহত্যাগ করলে সেই ব্যাক্তি পরমগতি লাভ করেন |
যজুর্বেদের পুরোহিতরা কোনো কাজ করার সময় ওঁ মন্ত্র টি জপ করতেন | আবার ব্রহ্ম নামক পুরোহিত কোনো কিছুর সম্মতি বোঝাতে ওঁ শব্দ টি বলতেন |যজ্ঞকারীরা ওঁ মন্ত্রটি উচারণের পর যজ্ঞ শুরু করেন |ব্রাহ্মহ্মণরা বেদ পাঠের শুরুতে ওঁ মন্ত্র উচ্চারণ করেন | ওঁ শব্দ টি পরব্রহ্ম | ওঁ – কার শব্দটি জগতের সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছে |বেদ – বেদান্তের মূলমন্ত্র হলো ওঁ – কার |এর মধ্যে বেদের সার জ্ঞান রয়েছে | ওঁ – কার শব্দটির মধ্যে জগতের নামরূপের নির্যাস লুকিয়ে আছে | আমাদের হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ট পবিত্র নাম ওঁ প্রতীক হলো ওঁ – কার মন্ত্র | ওঁ হলো সমস্ত শব্দের আশ্রয় স্বরূপ |ওঁ – কার রহস্য অসাধারণ এবং অনন্ত ভাবের বাহক |
ঋষিদের মতে সমস্ত ব্রম্মান্ড ওঁ – কার শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে | এর মধ্যে জগতের স্থিতি | ওঁ – কার সৃষ্টি – স্থিতি ও সংহারের প্রতীক স্বরূপ | ওঁ – কার কে এক ও অখণ্ড পরম শিব বলা হয় | ওঁ এই শব্দটি হলো অসীম এবং চিরন্তন | এই শব্দটির কোনো ধ্বংস নেই | আমরা অনেকেই জানিনা যে এই ওঁ – কার আর ব্রহ্ম এক জিনিস | ওঁ – কার এই শব্দটি সঙ্গে একাত্ম হওয়ায় আমাদের জীব জগতের প্রধান লক্ষ্য |