গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ বা জ্যোতিষ্করা প্রত্যক্ষভাবে মানবজীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে ?

গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহ বা জ্যোতিষ্করা প্রত্যক্ষভাবে মানবজীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে

এই ব্যাপারগুলি সাধারণে ভালো রকম না বুঝলেও , এর উল্লেখ করছি এই জন্য যে ,আমি চাই জ্যোতিষের নিতান্ত গোড়াকার কথা যা , অর্থাৎ যা তার গাণিতিক ভিত্তি তারই  সম্বন্ধে সঠিক বা বৈজ্ঞানিক ধারণায় উপনীত তে | সম্বন্ধে স্পষ্ট পরিষ্কার   ধারণা কারও  নেই ,সকলেরই নির্ভর পুঁথির উপর ,যিনি যে পুঁথি অনুসারে বিচার করেন ,তিনি তারই  নির্দেশকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন |এখানে ,পঞ্জিকার ভুলের কথা আমি ধরছি নাআমি রে নিচ্ছি বিশুদ্ধ পাঁজি থেকেই নির্ভুল ভাবে গণিতাংশ  গ্রহণ করা য়ে থাকে | কিন্তু তা সত্ত্বেও  ,জ্যোতিষীদের মধ্যে যে কী রকম মতভেদ তে  পারে সেই ব্যাপারটিই আমার আলোচ্য |

সব বিজ্ঞানেই এক একটা ব্যাপারর  নানা রকম উপপত্তি নানা পন্ডিত দিয়েছেন |কিন্তু, বৈজ্ঞানিক   –সঙ্ঘ সব উপপত্তিগুলিই গ্রহণ করেন নি ,কার্য্যকারণ ধরে যে উপপত্তিটি প্রমাণিত হয়েছে , তাই গ্রহণ করে বাকিগুলি পরিত্যাগ করেছেনএই সম্বন্ধে আমি পড়াশুনা করে এবং বাস্তবিক ভাবে তার পর্যালোচনা করে এক একটি  উপপত্তি খাড়া করেছি এবং তা আমার কাছে সুসঙ্গত মনে হয়েছে বলেই যে ,তার মধ্যে কোন ভুলত্রুটি থাকতে পারে না ,একথা বলবার মতন  হাস্যকর দুঃসাহস আমার নেই |

 ফলিত জ্যোতিষের প্রথম উপপত্তি হচ্ছে এই যে ,কোন গ্রহ ,নক্ষত্র , উপগ্রহ বা জ্যোতিষ্কের প্রত্যক্ষভাবে আমাদের উপর কোন প্রভাব নেই |

কথা প্রথম শুনলেই মনে হতে পারে যে ,এটা বুঝি ফলিত জ্যোতিষের বিরুদ্ধবাদীর উক্তি | কিন্তু ,বস্তুত তা নয় | বাস্তবিকই প্রত্যক্ষভাবে কোন গ্রহ বা নক্ষত্রের প্রভাব আমাদের উপর আসতে পারে না | সূর্য্য চন্দ্রের প্রভাব পৃথিবীর মধ্য দিয়ে ছাড়া আমাদের উপর অভিব্যক্ত হয় না | পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও আপেক্ষিক অবস্থান হিসাবে তাদের প্রভাবের যে ইতরবিশেষ   হয় ,তা প্রত্যক্ষ সত্য |

জ্যোতিষ্করা প্রত্যক্ষভাবে

ফলিত জ্যোতিষের দ্বিতীয় উপপত্তি হচ্ছে এই যে , পৃথিবী যেন একটি প্রকান্ড বৈদ্যুতিক  চুম্বক (Electro -Magnet)এবং জীব দেহগুলি ,ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক যন্ত্র (Electrical  apparatus)| কাজেই ,পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে (Magnetic  field) যে কোন রকম পরিবর্তন হলে জীবদেহগুলির উপর তার প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী |  

  এর তৃতীয় উপপত্তি হচ্ছে এই যে ,পৃথিবীর উপর সমস্ত গ্রহনক্ষত্রের প্রভাব আছে ,এবং সেই প্রভাব পৃথিবীর গ্রহনক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে |

পৃথিবী এবং গ্রহনক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থান আমরা পৃথিবীর গতির দুটি রেখা দিয়া জানতে পারি |একটি হচ্ছে পৃথিবীর দৈনিক গতির রেখা এবং সেটিকে আমরা বলি বিষুব রেখা (Equator) আর একটি হচ্ছে পৃথিবীর বার্ষিক গতির রেখা যাকে আমরা বলি ক্রান্তিবৃত্ত বা রবিমার্গ (Ecliptic ) |  

অতএব ,ফলিত জ্যোতিষের চতুর্থ উপপত্তি হচ্ছেপৃথিবীর দৈনিক বার্ষিক গতির দুটি রেখা আকাশবিষুব ক্রান্তিবৃত্ত দিয়ে পৃথিবীর উপর বিভিন্ন গ্রহনক্ষত্রের প্রভাব জানা যাবে |

এর পঞ্চম উপপত্তি হচ্ছে এই যে , ক্রান্তিবৃত্তের   দুপাশে অংশের মধ্যে যে সকল গ্রহ বা নক্ষত্র থাকবে তাদের দ্বারা ক্রান্তিবৃত্ত প্রভাবিত হবে |

কাজেই বোঝা যাচ্ছে ,আকাশে যত নক্ষত্র আছে সকলগুলির প্রভাব ক্রান্তিবৃত্তের উপরে নেই , কেবল দুপাশে আট অংশের মধ্যে যে নক্ষত্র আছে ,তাদের প্রভাব আমরা ধরছি | পাশে আট অংশ , পাশে আট অংশ |এই ষোল অংশের মধ্যে যে নক্ষত্রগুলি আছে তাদের নিয়েই রাশিচক্র |এই উপপত্তি যদি ঠিক হয় ,তাহলে বুঝতে হবে ,ক্রান্তিবৃত্তের উপর স্থির নক্ষত্রের প্রভাবই  রাশির প্রভাবের মূল |

 এই রাশিচক্র স্থির ,কিন্তু গ্রহগুলি গতিশীল | রাশিচক্র নক্ষত্রের প্রভাবে এক রকম শক্তি বিশিষ্ট হয় এবং গ্রহের প্রভাবের দ্বারা প্রতি মুহূর্তেই শক্তির পরিবর্তন হয় |প্রত্যেক স্থানে বিষুবরেখার  চারটি বিন্দু দিয়ে ,এই শক্তিগুলি পৃথিবীকে আকর্ষণ করছে |এই বিন্দু চারটি দিয়ে ,রাশিচক্রের যে যে বিন্দু থেকে শক্তি পৃথিবীতে আকৃষ্ট হচ্ছে ,সেগুলিরই পারিভাষিক নাম হচ্ছে কেন্দ্রভাব,- ইংরাজীতে Angles  |এই হচ্ছে ফলিত জ্যোতিষের ষষ্ঠ উপপত্তি এবং সেক্ষেত্রে  Semi  -Arc  দিয়ে ভাবগণনা একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত উপায় |

 জ্যোতিষের গাণিতিক ভিত্তি বা উপপত্তি আমি যা বুঝতে পেরেছি , এইখানে তা সংক্ষেপে উল্লেখ করলাম| ফলিত জ্যোতিষের যে তিনটি বিভাগগাণিতিক ভিত্তি ,প্রভাব ,অসাধারণ এবং ফলাদেশএই তিনটির গোড়া ধরে বৈজ্ঞানিক ভাবে তাদের নিয়মগুলি সাজাতে হবে|

এই আলোচনার ভিত্তিতে এই সত্য সহজেই বোধগম্য হয় যে, গ্রহ পৃথিবীর জীবকুলের ওপরে মহাকাশের জোতিষ্কমণ্ডলীর প্রভাব প্রতক্ষ না হলেও, পৃথিবীর ওপর তাদের প্রভাবের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের  জীবকুলের ওপর অবশ্যই বর্তায় |

Author Bio

Related Posts