আমাদের যে কোনো শুভ কাজে আমরা শাঁখ বাজিয়ে থাকি | বিবাহ ,অন্নপ্রাশন ,পৈতে , যে কোনো পুজোতে ইত্যাদি যে কোনো শুভ কাজে আমরা শাঁখ বাজাই | বহু প্রাচীন কাল থেকে এই শাঁখের গুঁড়ো আমাদের রূপ চর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে | এই শাঁখ থেকে তৈরী শাখা আমাদের হিন্দু নারীদের হাতে পরতে দেখা যায় | মনের অস্থিরতা দূর করতে আমরা অনেক সময় শাঁখ এর আংটি পরি |
শাঁখের শব্ধ শুনলেই মনটা ভরে যায় | মনে পরে সন্ধ্যে বেলার কথা | গ্রামের কোনো এক বধূ সন্ধ্যেবেলা তুলসীতলাতে প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধ্যে দিচ্ছে আর তার সাথে শোনা যায় শাঁখের আওয়াজ | বহু প্রাচীন কাল থেকে আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে এই শাঁখের ব্যবহার হয়ে আসছে |
সাধারণত সোমবারে শাঁখের পুজো করা হয় | আমাদের পুজোপার্বনে ২ ধরণের শাঁখের ব্যবহার হয়ে আসছে | ১টি বড়ো শাঁখ বাজানোর জন্য আর ১টি ছোট শাঁখ ও ব্যবহার করি আমরা | এই ছোট শাঁখ টি কে পানিশঙ্খ বলা হয় | এই পানিশঙ্খ এর মধ্যে গঙ্গার জল রাখা হয় | বড়ো শাঁখ টি বাজানো হয়ে গেলে ধুয়ে রাখতে হয় | সাধারণত বড়ো শাঁখ টিকে হলুদ কাপড়ে জড়িয়ে রাখতে হয় , ওপর দিকে ছোট শাঁখ টিকে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে রাখতে হয় | এই শাঁখের আওয়াজে নানান জীবাণু দূরে চলে যায় | নানা রকম নেগেটিভ এনার্জি দূর হয় | বহু প্রাচীন কাল থেকে শাঁখের গুঁড়ো আমাদের রূপচর্চাতে ব্যবহার হয়ে আসছে | শাঁখের আর একটি ব্যবহার হলো কালাজ্বরের ওষুধ হিসাবে | জীবন্ত শাঁখের মাংসল অংশটি পাকাকলার ভিতরে কিংবা মিষ্টির ভিতরে ভরে কালাজ্বরের রোগীকে খাওয়ালে কালাজ্বরের মতো অসুখ ও সেরে যায় |
জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা আছে নিয়মিত শাঁখ বাজালে হার্ট সুস্থ থাকে | মনের অস্থিরতা দূর করতে অনেকে আবার নাভিশঙ্খ কিংবা শাঁখের আংটি পরে থাকেন |এটাতে মন ভালো থাকে | এখনো এমন অনেক হিন্দু নারী আছে যারা শাঁখা ভেগে গেলে নতুন শাঁখা না পরা পর্যন্ত জল স্পর্শ করে না |
শাঁখা আমাদের হিন্দু নারীদের কাছে সধবার চিহ্ন | শিশুদের যাতে নজর না লাগে তার জন্য অনেকে শাঁখের টুকরো রুপো দিয়ে বাধিয়ে ধারণ করে থাকে | কোনো কোনো জেলাতে পুজোর সময় নতুন শাঁখা পরার নিয়ম আছে |
আবার আসি দক্ষিণাবর্ত শাঁখের কথায় | এই দক্ষিণাবর্ত শাঁখ স্থাপনের কিছু নিয়ম আছে | সেই নিয়ম মেনে এই দক্ষিণাবর্ত শাঁখ স্থাপন করলে পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর হয় | প্রথমে পঞ্চামৃত দিয়ে এই শাঁখ টি কে ধুয়ে তার পর একটি পরিষ্কার তামার পাত্রে লালকাপড় রেখে তার ওপর এই দক্ষিণাবর্ত শাঁখ টি কে রাখতে হবে | তারপর অল্প আতপচাল ,একটি সুপারি আর একটি মুদ্রা রাখতে হবে | এরপর শাঁখের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে | নৈবেদ্য আর মিষ্টি নিবেদন করতে হবে | ধুপ আর প্রদীপ দিয়ে আরতি করতে হবে | আমাদের ঘরে ঠাকুরের আসনে এই দক্ষিণাবর্ত শাঁখ টি কে রেখে দিতে হবে | এবং নিয়মিত পুজো করতে হবে | এর ফলে আমাদের আর্থিক কষ্ট দূর হবে |
আমরা দেখেছি প্রাচীনকালে বাড়িতে ডাকাত পরলে সেই বাড়ির লোক শাঁখ বাজাতো | এর কারণ হলো ডাকাত পরার খবর সবাই কে জানানো হতো এই শাঁখ বাজিয়ে | পাশের গ্রামের লোক দের কে জানানো হতো | আবার ভূমিকম্পকের সময় আমরা এখনো শাঁখ বাজিয়ে থাকি | এই শাঁখ বাজিয়ে আমরা দেবতাকে স্বরণ করি | তিনি যেন আমাদের রক্ষা করেন | আর তার সাথে সাথে ভূমিকম্পের খবর সবাই কে জানিয়ে দেয়া হয় |
শাঁখ আমরা সাধারণত ৩ বার বাজিয়ে থাকি | এর ও কিছু অর্থ আছে | ভগবান ব্রহ্মা , বিষ্ণু আর মহেশ্বর এই তিন দেবতাকে স্বরণ করি তিন বার শাঁখ বাজিয়ে | তিন বারের বেশি শাঁখ বাজানো উচিত নয় | কারণ চার বার শাঁখ বাজালে দানব কে আমন্ত্রণ করা হয় | তাই তিন বারের বেশি শাঁখ বাজালে সংসারের অমঙ্গল হয় | সরাসরি মাটির ওপর শাঁখ রাখতে নেই | মাটির ওপর কিছু রেখে তার পর শাঁখ রাখতে হয় |
কোনো মন্দিরের দরজা খোলার সময় আগে শাঁখ বাজিয়ে তার পর দরজা খুলতে হয় | শিব ও সূর্য পুজোর সময় শাঁখের মধ্যে জলদান করতে নেই | আর একটি শাঁখ আছে তার নাম জলশঙ্খ | এই জলশঙ্খের ভিতর রাখা জল গঙ্গা জলের মতোই পবিত্র বলে মনে করাহয় |
হিন্দু নারীদের কাছে সধবার প্রতীক চিহ্ন হলো শাঁখা | তাই স্বামীর মৃত্যুর পর এই শাঁখা ভেঙে ফেলা হয় | আমাদের হিন্দুদের যে কোনো পুজো পার্বনে , মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে , সব ধরণের স্ত্রীআচার এর সময় শাঁখ বাজানো হয় | শাঁখের আওয়াজ কে পবিত্র ধ্বনি বলে আমরা মনে করে থাকি | আর এই শাঁখ সব সময় তিন বার বাজাতে হয় | কখনোই চার বার বাজানো উচিত নয় | তাহলে দানব কে আমন্ত্রণ জানানো হয় | আর তার সাথে সাথে দেবতারা রেগে যান |