কোনো একটা রাশিতে যদি তার অধিপতি গ্রহ থাকে ,তাহলে সেই রাশি এবং তার অধিপতি দুটোরই গুণ সম্পূর্ণ বিকাশ পাওয়া উচিত , আর কোন গ্রহ যদি তার নিজের ক্ষেত্রে বিপরীত রাশিতে থাকে তাহলে সেই গ্রহ ও রাশির ফল বিকাশে বাধা হওয়া উচিত | এই নিয়ম অনুসারে গ্রহ নিজের ক্ষেত্রে থাকলে বলবান হয় এবং শত্রুক্ষেত্রে থাকলে দুর্বল হয় | সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহ ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহের বিরোধী , অর্থাৎ সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহ এবং ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহ যে একে অন্যের শত্রু | এই হিসাবে রবি , চন্দ্র ,মঙ্গল, বৃহস্পতি প্রত্যেকটি শনি, বুধ ,শুক্রের শত্রু এবং শনি,বুধ ,শুক্রের প্রত্যেকটি রবি ,চন্দ্র ,মঙ্গল ,বৃহস্পতির শত্রু , এবং রবি ,চন্দ্র ,মঙ্গল, বৃহস্পতি যে পরস্পরের মিত্র এ–ও বোঝা শক্ত নয় |
কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, ,সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহ ও ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহের মধ্যে যে শত্রুতা তা কি সব ক্ষেত্রে এক ধরনের ? প্রত্যেক সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহ কি প্রত্যেক ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহের সমান শত্রু ? এই শত্রুতার কি কোনও তারতম্য আছে ? সূর্য্য সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহ এবং শনি, বুধ ,শুক্র ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহ – শেষের তিনটিই কি সূর্য্যের সমান শত্রু অথবা কোন পার্থক্য আছে ? সূর্য্যের কাজ নূতন দেহকোষের সৃষ্টি এবং শনির কাজ দেহকোষের ধ্বংস ,বুধের কাজ অহিতকারী পদার্থকে নিজস্ব করে নেওয়া ,এবং হিতকারী পদার্থের প্রবেশে বাধা দেওয়া ,শুক্রের কাজ শরীরের পোষণকারী অংশকে শরীর থেকে বের করে দেওয়া এবং অহিতকারী পদার্থের বহিষ্কারে বাধা দেওয়া ;অতএব শনি যেমন রবির প্রত্যক্ষ শত্রু –বুধ শুক্র তেমন নয় এবং বুধ ,শুক্রের মধ্যে শুক্র যত , বুধ তত নয় | রবি এবং শনির কাজ স্পষ্টতই বিপরীত ; রবি নূতন নূতন সৃষ্টি করছে ,এবং অপরদিকে শনি তা ক্রমাগত ধ্বংস করছে | শুক্র প্রত্যক্ষ ভাবে ধ্বংস না করলেও ,শরীরের শ্রেষ্ঠ অংশ শরীর থেকে বের করে দিচ্ছে এবং সেই হিসাবে সৃষ্টি রক্ষার অন্তরায় হচ্ছে |
অতএব শনির পরে রবির শত্রু শুক্র |বুধ ধ্বংসের সাহায্য করে কিন্তু সূর্য্যের সৃষ্টির পক্ষে প্রত্যক্ষ বাধা সৃষ্টি করে না ,সে হিসাবে বুধের সঙ্গে সূর্য্যের শত্রুতা তুলনামূলক ভাবে কম | এইভাবে বিচার করে গেলে আমরা দেখতে পাব ,রবি–শনি যেমন পরস্পরের ভীষণই শত্রু ,মঙ্গল–বুধ এবং বৃহস্পতি–শুক্র তেমনি পরস্পরের ভীষণই শত্রু | পরস্পরের ঘোর শত্রু দুটি গ্রহ যদি একসঙ্গে থাকে ,তাহলে দুজনের গুণের হানি করে নানারকম অনর্থের সৃষ্টি করে |
কিন্তু গ্রহগণ পরস্পরের শত্রু হলেও ,যখন একসঙ্গে যুক্ত হয় তখন পরস্পরের প্রকৃতি নষ্ট করলেও ,শত্রুর ক্ষেত্রে গেলেই যে গ্রহের মূল– প্রকৃতি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে ,তা সব সময়ে বলা চলে না | কারণ ,যদিও কোন একটা গ্রহের সঙ্গে একটা বা দুটো রাশির ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে তাহলেও রাশিচক্রের প্রত্যেক রাশিকেই নিজের ভাবে কম–বেশি অনুপ্রাণিত করবার ক্ষমতা গ্রহমাত্রেরই আছে | যদি রাশিগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর প্রাণবন্ত দেহ এবং গ্রহগুলিকে চৈতন্য মনে করা যায় , তাহলেই ব্যাপারটা কতক বোঝা যাবে | বাঘের মধ্যে যে চৈতন্য আছে তা বাঘের দেহ আশ্রয় করলেই সম্যক ভাবে ফুটে ওঠে ; যদি তা মানুষের দেহ আশ্রয় করে , তাহলে তা উপযুক্ত অবয়বের অভাবে তার কার্য্য সম্পূর্ণভাবে করতে পারে না বটে কিন্তু সেই মানুষের দেহের মধ্যে ব্যাঘ্রের মতো হিংস্র ভাবের বিকাশ হবে ,সে সম্বন্ধে কোন ভুল নেই |
রাশির সঙ্গে অধিপতি গ্রহের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ট| সৃষ্টি–জ্ঞাপক রাশিগুলিতে সৃষ্টি–জ্ঞাপক গ্রহগুলি এবং ধ্বংস–জ্ঞাপক রাশিগুলিতে ধ্বংস–জ্ঞাপক গ্রহগুলি বেশ ভালো কাজ করতে পারে ; এ ছাড়াও রাশির সঙ্গে গ্রহের এক রকম সম্বন্ধ আছে | মেষকে যদি পৃথিবীর জন্ম–লগ্ন ধরা যায় ,তাহলে মেষ ,বৃষ প্রভৃতি পর পর রাশিগুলিকে দ্বাশটি ভাব বলে ধরা যেতে পারে | এই হিসাবে এক রাশির অধিপতি গ্রহের অন্য রাশির সঙ্গে একটু নূতন ধরনের সম্বন্ধ স্থাপিত হয় |