শিব কেন লিঙ্গ রূপে পূজিত হন ?
যত্র জীব ,তত্র শিব | শিব ভক্তের কাছের দেবতা | অল্পতেই শিব সন্তুষ্ট হন | এবং খুশি হয়ে ভগবানের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন | লিঙ্গ রূপে শিব বেশি পূজিত হন | শিব লিঙ্গ রূপে আবার মূর্তি রূপে ও পূজিত হন | আমাদের এই জগৎ সংসার সৃষ্টির অনেক অনেক আগে থেকেই শিব লিঙ্গ রূপে পূজিত হয়ে আসছেন | আমরা আমাদের সংসারে রোজ শিবের পুজো করে থাকি | শিবের আদি অন্ত নেই | তিনি সাকার আবার তিনি নিরাকার |
ভগবান শিব কে সন্তুষ্ট করার সঠিক সময় হলো শিবরাত্রি | তাই শিবরাত্রি কে ব্রতরাজ ও বলা হয় | আমরা ভগবান কে চার প্রহরে চারটি উপাদান দিয়ে শিবের পুজো করে থাকি | প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে শিবের পুজো করানো হয় | আবার দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে পুজো করানো হয় | তৃতীয় প্রহরে ঘি এবং চতুর্থ বা শেষ প্রহরে মধু দিয়ে পুজো করানো হয় |
এই যে চার প্রহরে চার রকম জিনিস দিয়ে পুজো করা বা স্নান করানোর কিছু অর্থ আছে | প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে ভগবান কে স্নান করালে ভক্তের রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয় | দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে স্নান করালে ভক্তর সব পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয় | তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে ভগবান কে স্নান করালে ভক্তের দুঃখ – দারিদ্র ও শোক থেকে মুক্তি মেলে | চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে স্নান করালে ভক্তের সব পাপ ,শাপগ্রস্ত ও রাজ্ যক্ষা রোগ দূর হয়ে যায় |
ভারতে ভগবান শিবের লিঙ্গ রূপে পূজার প্রচলন বেশি | শিব কে লিঙ্গ রূপে আবার মূর্তি রূপে পুজো করা হয়ে থাকে | শিবলিঙ্গ নিরাকার তাই শিব লিঙ্গে পুজো করা হয় | আবার শিব সাকার ও তাই মূর্তি রূপে তাঁর পুজো করা হয়ে থাকে | আমাদের পুরান শাস্ত্রে শিব লিঙ্গের বহু ব্যাখ্যা দেয়া আছে | পুরান শাস্ত্রে বলা আছে যার শেষ আছে সেটাই হলো লিঙ্গ | অনেকে আবার বলেছেন যার লয়প্রাপ্ত হয় সেটা হলো লিঙ্গ | আবার অনেকে বলেন যা শরীরের মধ্যে লীন হয়ে থাকে সেটাই হলো লিঙ্গ | আসলে লিঙ্গ শব্দটির সাধারণ অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক |
পুরান শাস্ত্রে বিভিন্ন রকমের লিঙ্গের কথা বলা আছে | লিঙ্গ পাঁচ রকমের হয় |যেমন ( ১ ) স্বয়ম্ভূ লিঙ্গ ( ২ ) বিন্দু লিঙ্গ (৩ ) প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গ ( ৪ ) চর লিঙ্গ ( ৫ ) ম গুরু লিঙ্গ |
পুরানে লিঙ্গের উৎপত্তি নিয়ে অনেক কথা বলা আছে | শিবের জ্যোতিলিঙ্গের কথা যেমন বলা আছে তেমন আবার শিবের জননেন্দ্রিয় থেকে লিঙ্গের উৎপত্তির কথা ও বর্ণনা করা আছে |
শিব লিঙ্গের উৎপত্তি নিয়ে পুরাণে নানা কথা , নানা গল্প আছে | জ্যোতির্লিঙ্গের কথা ,শিবের জননেন্দ্রিয়ের কথা সুন্দর ভাবে গল্প করে বলা আছে |
আমরা বিভিন্ন শাস্ত্রে ভারতের বিখ্যাত ১২টি শিব মন্দিরের উল্লেখ পাই | ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আছে এই ১২টি শিব মন্দির গুলি | শিবের ২টি রূপ আছে | একটি লিঙ্গ রূপ আর অপর রূপ টি হলো মহেশ্বর ভাব |
আমরা রোজ রোজ শিব ভগবান কে পুজো করে থাকি | শিব ভগবান কে আমরা আবার ভোলা মহেশ্বর ও বলে থাকি | এই ভোলেমহেশ্বর অতি অল্পতেই সন্তুষ্ট হন | তিনি দয়ালু ,ভক্তের ভগবান | আপনি কোনো মন্দিরের শিব পুজো করলেন , নাকি শিবের কোনো ধামে গিয়ে ভগবান কে পুজো করলেন , নাকি আপনার বাড়ির শিব লিঙ্গের পুজো করলেন | আপনি যেখানেই পুজো করুন না কোনো ভক্তি ভাবে ,সঠিক ভাবে পুজো করলে মানুষের মুক্তি লাভ হয় | ভগবান ভক্তের ওপর খুব সন্তুষ্ট হন |
শুধু পুজো করলেই যে ভালো হবে তেমন নয় | শিব ভগবান কে দর্শন ও নমস্কার করলেও আপনার মঙ্গল হবে | আপনি অন্য সব দেবদেবী কে অনেক বছর ধরে পুজো করে যে ফল পাবেন আপনি শুধু ১ মাস শিবের পুজো করলে সেই ফল পাবেন |
শিব লিঙ্গ কে যদি গঙ্গা জল দিয়ে স্নান করানো যায় তাহলে আপনার সব অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন | আর ও ভালো হয় যদি ক্ষীর দিয়ে স্নান করানো যায় | ঘি দিয়ে ও স্নান করালে ভক্তের সব অপরাধ ভগবান ক্ষমা করে দেন |
নারী ,পুরুষ ,শিশু ,সবাই শিব ভগবান কে পুজো করতে পারেন | শিবের স্তব পাঠ ,কথা শোনা , শিব নাম সংকীর্তন করলে ভক্তের মঙ্গল সাধন হয় |
শিব ভগবানকে যদি পদ্ম ফুল ,বেলপাতা ,এবং শঙ্খপুস্প দিয়ে শিবলিঙ্গের পুজো করলে অর্থ ঐশ্বর্য লাভ হয় | এছাড়া ও শিব লিঙ্গকে দূর্বা দ্বারা পুজো করলে আয়ু লাভ হয় | যে সব ভক্তের সন্তান নেই তারা ধুতরা ফল চন্দন সহযোগে শিব লিঙ্গের পুজো করলে সন্তান লাভ হয় |এছাড়া শিব লিঙ্গ কে আকন্দফুল আর সাদা পদ্ম ফুল ও নিবেদন করা যায় | ভগবান খুব প্রসন্ন হন |
এছাড়াও শিব লিঙ্গ কে জুঁই ফুল ,করবি ফুল ,চন্দন মাখানো আতপচাল এইসব কিছু দিয়ে পুজো করলে ভগবান খুব প্রসন্ন হন |
শিব লিঙ্গের পুজোর পর ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করুন | পাকা আম ও কলা দিয়ে ভোগ নিবেদন করুন | ভগবান সন্তুষ্ট হবেন | ভক্তের মঙ্গল করবেন ভগবান | জয় শিব ভগবান |