মাথার ওপর ছাদ | এই কথাটির খুব গুরুত্ব আছে |আশ্রয় ছাড়া আমরা থাকতে পারি না | বাঙ্গালীদের কাছে বাড়ি জিনিসটি খুব গুরুত্বপূর্ণ |আমাদের সবার থাকার একটি জায়গা আছে | কেউ পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বসতবাড়ি | আবার কেউ কেউ নিজ ক্ষমতার দ্বারা তৈরী বাড়ি আছে |
আমাদের সবার সাধ হয় সাজানো গোছানো সুন্দর একটি বাড়ি | আর সেই বাড়িতে যদি কোনো বাস্তুদোষ থাকে তাহলে তো দুঃখের শেষ নেই | এই বাস্তু দোষের কারণে সংসারে নানা ঝামেলা ,বাধা বিপত্তি ,অভাব অনটন ,অশান্তি , নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে | তাই এই বাস্তুদোষ কাটানো দরকার | তাহলে সব সমস্যা সমাধান হবে |
কিভাবে কাটাবো এই বাস্তুদোষ | কি ভাবে মুক্তি পাবো এই সব ঝামেলা থেকে | পৈতৃক বসতবাড়ি তে বাস্তু দোষ কাটানো সম্ভব কিন্তু আমাদের শহরে ফ্লাট বাড়িতে কি ভাবে বাস্তু দোষ কাটাবো আমরা | কি ভাবে মুক্তি পাবো এইসব ঝামেলা থেকে |
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ভিটেতে কি ভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব | সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে | কিছু পুজো পদ্ধতি করলে এই বাস্তুদোষ কাটানো সম্ভব | প্রতিদিন ধুপ ,দীপ জ্বালানো ,শাঁখ বাজানো ,ইষ্ট দেবতা জপ করা | এইসব করলে বাস্তু দোষ অনেকটা কমে যায় | ফ্ল্যাট বাড়িতে গাছের পরিবর্তে বনসাঁই রাখা খুব ভালো |
বৈশাখ ,জ্যৈষ্ঠ ,শ্রাবন ,কার্তিক ,অগ্রহায়ণ ,মাঘ আর ফাল্গুন এই মাস গুলোতে গৃহনির্মাণ আরাম্ভ করলে শুভ হয় |রবিবার ,মঙ্গলবার ,শনিবার এই ৩টি বারে গৃহ নির্মাণ শুরু করা উচিত না | `পূর্ণিমা অমাবস্যা ,দ্বিতীয়া,তৃতীয়া ,পঞ্চমী ,সপ্তমী,দশমী ,একাদশী ,ত্রয়োদশী এই তিথি গুলো গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে শুভ | শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা আর কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ এই তিথি গুলো ও শুভ |
বাড়ি তৈরী করলেই শুধু হয় না | তার আগে অনেক কিছু দেখে নিতে হয় | যে জমিতে বাড়ি বানাচ্ছেন সেই জমিটি কেমন | অতীতে এই জমিটির ওপর কোনো কবর স্থান ছিল কিনা | জমিটি ভাগাড় ছিল না তো | এই সব যদি থেকে থাকে তাহলে কিন্তু ঘর অমঙ্গল | সংসারে নানান অশান্তি হবে ,অসুখ এ জর্জরিত হয়ে পরবে , সংসারের উন্নতি তে বাধা আসবে , নানান অশান্তিতে ভুগতে হতে পারে |
যে জমিতে ক্ষার বেশি সেই জমিতে বাড়ি তৈরী করা উচিত না | এইরকম জমিতে বাড়ি তৈরী করলে গাছ পালা বেশি দিন বাঁচে না , বাড়ি ও বেশিদিন টিকে না , গৃহে যদি কোনো পোষ্য থাকে তাহলে সেই পোষ্য ও বেশিদিন বাঁচে না |
তাহলে কি রকম জমিতে আমরা বাড়ি তৈরী করবো ? সব থেকে ভালো হয় চৌকো জমিতে বাড়ি তৈরী করা | চৌকো জমি যদি না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বাড়িটি কে চৌকো বানাতে হবে | আয়তকার জমিও ভালো |
চার রকমের জমি হয় | ১ গজপৃষ্ঠ ,২ কূর্মপৃষ্ঠ , ৩ নাগপৃষ্ঠ, ৪ দৈত্যপৃষ্ঠ | গজপৃষ্ঠ : জমিতে বাড়ি বানালে খুব ভালো হয় | সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায় | পরিবারের সবাই সুস্থ থাকবে | অর্থের অভাব হবে না | কূর্মপৃষ্ঠ : এই জমিতে বাড়ি বানালে শুভ ফল লাভ হয় | পরিবারের সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে | সংসারে উন্নতি হয় | শ্রীবৃদ্ধি ঘটে | নাগপৃষ্ঠ: এই জমি বাড়ি বানানোর জন্য শুভ না | মানসিক চঞ্চলতা বেড়ে যাবে | শত্রু বৃদ্ধি পাবে | দৈত্যপৃষ্ঠ : এই জমিতে বাড়ি তৈরী ও শুভ না | কারণে অকারণে নানান ঝামেলায় জড়িয়ে পরতে পারেন | মানসিক ,শারীরিক সব দিক থেকে সমস্যা দেখা দিতে পারে |এতটাই সমস্যা দেখা দেবে যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হবেন |
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জমির ঢাল নির্ণয় করা | কোন দিকে ঢাল শুভ | আবার কোন দিকে ঢাল অশুভ | এইসব দেখে নেওয়া দরকার বাড়ি তৈরির সময় | পূর্বদিকে ঢাল হলে শুভ হয় | সব দিক থেকে সাফল্য আসে | আবার পশ্চিমদিকে ঢাল ও শুভ হয় না | পশ্চিমদিকে ঢাল হলে সংসারে শ্ৰীবৃদ্ধি কমে যায় | আবার দক্ষিণদিকের ঢাল ও শুভ না | বাড়িতে সবার অসুখ বিসুখ লেগেই থাকবে |সংসারে সবার সাথে সবার মনোমালিন্য দেখা দিতে পারে | উত্তর দিকের ঢালু জমি শুভ ফল প্রদান করে |আয় উন্নতি বেড়ে যাবে | ধনসম্পদ বাড়বে | শুভ সংবাদ আসবে চারিদিক থেকে |
গৃহের রাস্তা কোনদিক হলে ভালো | জমি যদি চৌকো হয় তাহলে শুভ | আর ওই চৌকো জমির সবদিক দিয়ে যদি রাস্তা হয় তাহলে ভালো | বাড়ির প্রবেশ পথ যদি উত্তরদিকে অথবা উত্তর–পূর্ব দিক হলে খুব শুভ হয় |ঘরে যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করা হয় সেখানে ওম চিহ্ন রাখা খুব শুভ |গৃহে মোট দরজা জোর সংখ্যা হলে শুভ হয় |প্রবেশদ্বারের দরজাটি ভিতরের দিকে যেন খোলে সেটা খেয়াল রাখতে হবে | আর এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে প্রবেশদ্বারে যেন কোনো বাধা না থাকে |
ঘরের জানালা গুলি দিয়ে আলো বাতাস যেন ভালো ভাবে প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে | গৃহে সিঁড়িগুলি এমন ভাবে রাখতে হবে যেন ওপরে উঠতে সুবিধা হয় |বিজোড় সংখ্যার সিঁড়ি রাখলে শুভ | ফ্ল্যাট টি যেন সাজানো গোছানো পরিষ্কার পরিছন্ন হয় | সেই দিকে খুব নজর দিতে হবে |
বাস্তুদোষ কাটানোর একটু ভালো উপায় হলো , রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে একটি তামার পাত্রে জল রাখতে হবে খাটের মাথার দিকে | পরদিন সকালে ওই তামার পাত্রের জল কিছুটা মুখে চোখে ছেটাতে হবে আর খেতে হবে | বাস্তুদোষ অনেকটা কেটে যাবে | বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় মাথাটা উত্তরদিকে আর পা টা দক্ষিণদিকে রেখে ঘুমাতে হবে | তাহলে শরীর স্বাস্থ্য সর্বদা ভালো থাকবে | রান্না ঘরের ক্ষেত্রে যিনি রান্না করবেন তিনি যেন পূর্বদিক মুখ করে রান্না করেন | রান্না ঘর ,বার্থরুম সর্বদা পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা দরকার | তাতে নেগেটিভ এনার্জি দূরে থাকবে |