শাস্ত্র নির্দেশিত আচার-অনুষ্ঠান করে কি আমরা আদৌ উপকৃত হই ?

শাস্ত্র নির্দেশিত আচার

মানুষের জীবনে নানা রকম পরিবর্তন আসে | অনেক রকম আচারঅনুষ্ঠান আছে আমাদের জীবনে | এই সব আচারঅনুষ্ঠান আমরা কখনো মানতে পারি আবার কখনো পারিনা | কিছু নিয়ম আমাদের জীবনের আনন্দ আনে | যাতে আমাদের ভালো হয় তার জন্য এত আচারঅনুষ্ঠান | আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা এই সব কাজ কর্ম আমাদের জীবনে কতখানি সুফল নিয়ে আসে | আজ আমরা সনাতন ধর্মের কিছু সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবো |

ষষ্ঠীপুজো :   নবজাতক শিশুটি জন্মাবার পর এই ষষ্ঠীপুজো নিয়মটি করা হয় | শিশুটি জন্মানোর পর থেকে ছয়তম দিনের রাত্রে বেলা এই নিয়মটি করা হয় | অনেক পরিবারের রীতি অনুসারে এই ষষ্ঠীপুজো করা হয় | শিশু জন্মানোর পর যে শুভ অশৌচ থাকে , সেই শুভ অশৌচ শেষ হলে তার পর ষষ্ঠীপুজো করা হয় | এটি শাস্ত্র সম্মত | এই সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো নবজাতক শিশুটির মঙ্গলসাধন করা | সন্তানটির কল্যাণসাধন করা |

হাতেখড়ি বা বিদ্যারম্ভ : শাস্ত্র মতেপাঁচ বছর বয়সে এই হাতেখড়ি হয় | শাস্ত্র মতে এই পাঁচবছর বয়স থেকে বিদ্যারম্ভ শুরু হয় |বর্তমানে দুবছর বয়সে আবার অনেকে হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করছে | তবে আবার অনেকে সেই পাঁচবছর বয়সেই হাতেখড়ি সম্পন্ন করেন |আমরা সাধারণত সরস্বতী পুজোর দিন এই নিয়ম টি করে থাকি | মা সরস্বতীর সামনে বসে পুরোহিত এর মাধ্যমে এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করি | এই সস্কারের  উদ্দেশ্য হলো সন্তান টি যেন শিক্ষিত হয় ,বুদ্ধিমান হয় ,বিচক্ষণ হয় |

ভিতপুজো বা গৃহপ্রবেশ  : গৃহে যদি সুখ না থাকে তাহলে আপনি অন্য কোথাও গিয়ে সুখ পাবেন না | আপনার ঘরে যদি সুখ থাকে তাহলে আপনি বাইরের সব সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবেন |আর আপনার বাসস্থানে যদি কোনোরকম অসুবিধা থাকে তাহলে আপনার প্রচুর অর্থ থাকলেও জীবনে সুখ পাবেন না | গৃহ নির্মাণের জন্য সঠিক স্থান নির্ণয় করাটা সবার আগে দরকার | তার পর শুভ দিন আর শুভ লগ্ন নির্ণয় করে ভিতপুজো  করতে হবে | জমির যেটুকু জায়গা নিয়ে বাড়ি তৈরী হবে সেই টুকু অংশের অগ্নি ,ঈশান,বায়ু আর নৈঋত এই ৪টি কোন ৪টি দন্ড পুঁততেহবে | গৃহ নির্মাণের সময় মনে রাখতে হবে যে জমিতে নাগের মাথা আর লেজ বাদ দিয়ে কোলে বা পিঠে বাড়ি তৈরী করতে হবে | অনেক সময় সঠিক  নিয়মে ভিত পুজো করলে অনেক দোষ কেটে যায় | গৃহ প্রবেশের দিন কিছু মাঙ্গলিক দ্রব্য হাতে নিয়ে নতুন বাড়িটিকে তিন বার বা সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হবে | এর পরে গৃহ প্রবেশ করতে হবে |     

গৃহপ্রবেশের সুফল :  শাস্ত্র মেনে ভিত পুজো আর গৃহ প্রবেশ করলে বাস্তুদোষ অনেকটাই কেটে যাবে |সেই গৃহটি শান্তি নীড়ে পরিণত হবে | আপনি নির্বিগ্নে আর শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন | 

শাস্ত্র নির্দেশিত আচার 1

সুখে আর দুঃখে পুজো : ভালো আর মন্দ এইনিয়ে তো জীবন | জীবন তো সব সময় একরকম ভাবে যায়না | শাস্ত্র মতে গ্রহের করণেই মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয় | দুরকম ভাবে দৈব কর্ম করা প্রয়োজন (১ ) শান্তি স্বস্তায়ন আর ( ২ ) দেবদেবীর ব্রত পালন |দৈহিক – মানসিক -পারিবারিক শান্তি স্থাপন ,কর্ম প্রাপ্তিতেবাধা ,চাকরিতে পদোন্নতি ,ব্যাবসার উন্নতির জন্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে শান্তি স্বস্তায়ন করা দরকার | সব অবস্থায় সর্ব ক্ষেত্রে ইস্টমন্ত্র  জপ করা মহা ফলদায়ী | এছাড়া প্রবল ফাঁড়া ও বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য মহা মৃর্ত্যুঞ্জয় প্রয়োগ |

শ্রাদ্ধ: মৃর্ত্যুর পর আমাদের আত্মার কি হয় ? আমাদের আত্মা বায়ুর মধ্যে বিরাজ করে | ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পরে |শাস্ত্র মতে পূরকপিন্ডদান আর নীড়ক্ষীর দানের মধ্যে দিয়ে আত্মার ক্ষুধা  তৃষ্ণা পূরণ করেন | দশটি ইন্দ্রিয়এর জন্য দশটি পূরক পিন্ড দেয়া হয় | আত্মা তখন এই দেহ কে আশ্রয় করে থাকে না | এই দেহকে বলা হয় প্রেত দেহ | নীর- ক্ষীর দান করলে আত্মার ক্ষুধা  তৃষ্ণা দূর হয় | শাস্ত্র মতে মৃর্ত্যুর দিন থেকে আরাম্ভ করে দশদিন পর্যন্ত দশটি পূরক পিন্ড দিতে হয় | এতকিছুর পর ও আত্মার প্রেত দেহ ত্যাগকরে যেতে পারে না তার জন্য শাস্ত্রে ১৬টি শ্রাদ্ধের কথা বলা আছে | এই ১৬টি শ্রাদ্ধের কাজ হলো প্রেত শরীরকে ধ্বংস করা | প্রেত শরীর থেকে আত্মা ভোগদহ প্রাপ্ত হয় | শাস্ত্র মতে আত্মা নিজ কর্ম ফল অনুসারে ফলপ্রাপ্ত হন |  শ্রাদ্ধেরঅনুষ্ঠানে যে সব দান কর্ম করা হয় আত্মা তার ফল পেয়ে থাকে | মৃতের পুত্র ,কন্যা ,পৌত্র ,পৌত্রীর সংস্কার ক্রিয়াদি সঠিক সময় মতো যাতে করা উচিত | 

মাসিক শ্রাদ্ধ আর বাৎসরিক শ্রাদ্ধ : শাস্ত্র মতে মৃত্যুর পর মৃত ব্যাক্তির উদ্দেশে প্রথম বছরে প্রতি মাসে ১টি করে মাসিক শ্রাদ্ধ করতে হবে | তার কারণ হলো আত্মা প্রেত লোকেও যেন তৃপ্ত হন ,অভুক্ত না থাকেন | কিন্তু আমাদের কর্ম ব্যাস্ততার দিনে প্রতি মাসে ১টি করে শ্রাদ্ধ করা  সম্ভব না | তাই বছরের শেষে দ্বাদশতম মাসে এক সপিন্ডকরন তিথি নির্বাচন করে সপিন্ডকরণ শ্রাদ্ধ করবেন |যে কোনো শুভ কাজের আগে বৃদ্ধি শ্রাদ্ধ করা উচিত | এর কারণ হলো পিতৃ পুরুষ কে স্মরণ করা | তাদের শুভ আশীর্বাদ লাভকরা | পূর্ব পুরুষের আত্মাকে সন্মান জানানো | 

গয়াকৃত্য : শাস্ত্র মতে সপিন্ডকরণ শ্রাদ্ধের পর গয়া ক্ষেত্রে গিয়ে পিন্ডদান করা উচিত | ফল্গু নদীর তীরে ,বিষ্ণুপাদপদ্মে ,অক্ষয় বটে আর প্রেত শিলায় পিন্ড দান করতে হয় | বাড়ি ফিরে ব্রাম্মণ কে ভোজন করতে হয় | গয়া যাওয়া সম্ভব না হলে গঙ্গা তীরে গিয়েও শ্রাদ্ধ করলে সমান ফল লাভ হয় | যুগ বদলে গেলেও এইসব নিয়ম গুলি এক থেকে গেছে | আজ কাল অনেকেই জানেন না এই সব নিয়ম গুলির কি মাহাত্ম | জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবন চক্রে এই সব নিয়ম গুলি বাধা আছে | মানুষের জীবন কে সঠিক নিয়মে চলার জন্য জগতের সনাতন ধর্মের এটাই শ্রেষ্ঠতম দান |

Author Bio

Related Posts